ওয়াসিম কামাল
লিবিয়ায় অবৈধ অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মেজর জেনারেল এমাদ মোস্তফা আল-তরাবলুসি,গতকাল ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে এক যৌথসভা করেন। এ সভায় লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে।
সভায় লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এটি লিবিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সংকট সমাধানে তিনি সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার, অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন এবং মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে লিবিয়া সরকারের কঠোর অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনার কথা জানান। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট সকল দেশের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় মান্যবর রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের মধ্যেও এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা স্মরণ করে লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় লিবিয়ার সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সবসময় নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করে আসছে এবং বর্তমানে লিবিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি পেশাজীবী বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, লিবিয়া বর্তমানে ইউরোপগামী অভিবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের প্রলোভনে পড়ে অনিয়মিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ দূতাবাস এসব অনিয়মিত অভিবাসীদের দ্রুত দেশে প্রত্যাবাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। রাষ্ট্রদূত আরও জানান, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সম্প্রতি ত্রিপলীসহ লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি নাগরিকদের অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তিনি বাংলাদেশি নাগরিকদের অপহরণ বন্ধে লিবিয়ান সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। এছাড়া, অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজতর করতে ‘খুরুজ নিহায়ী’ অর্জন (ওয়ান-স্টপ সার্ভিস) প্রক্রিয়া সহজ করতে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে লিবিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের অনাকাঙ্ক্ষিত আটক বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার বিশেষ করে বির আল-ঘানাম ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশিদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে দ্রুত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।
পরিশেষে রাষ্ট্রদূত লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসন ও মানব পাচারের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে লিবিয়া সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে লিবিয়া সরকারের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসাথে তিনি মানব পাচার প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে দূতাবাসের কার্যকর সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.