সঞ্জিত চন্দ্র শীল
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার "শামসুল ইসলাম আইডিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে'র সাবেক সভাপতি খসরুজ্জামান রিসন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা লিজার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে (গত ১০ মার্চ) উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের অবস্থিত ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চলতি রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে (২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত) বিদ্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, হোসেনপুর শাখার একটি সাইনবোর্ড। এতে লেখা রয়েছে নিম্ন তফসিল বর্ণিত ভূমি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ,হোসেনপুর শাখার নিকট দায়বদ্ধ। এতে বুঝা যায় যে, বিদ্যালয়ের ভূমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন সাবেক সভাপতি খসরুজ্জামান রিসন ও তার ভাই খালেকুজ্জামান। এছাড়া বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়( ছাদে )গড়ে তুলেছেন মাছের হ্যাচারি। বিদ্যালয় ভবনের ছাদে স্থাপন করেছেন একাধিক পানির ট্যাংকি যাহা হ্যাচারিতে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যালয়ের টিন সেট ঘরটিতে মাছের হ্যাচারি ও পোল্ট্রি ফার্মের খাবার মজুদ করে রেখেছেন সাবেক সভাপতি রিসন। অন্যদিকে ওই বিদ্যালয় মাঠের তিনটি মেহগুনি গাছ কেটে ফেলার তথ্য পাওয়া গিছে। স্থানীয় অভিভাবক বাচ্চু মিয়া এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জরুরি প্রতিকার দাবি করেছেন।
অভিযোগপত্র ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৭ বছর যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যৌথভাবে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তারা বিধিবহির্ভূত ভাবে স্কুলের ৩টি মেহেরগনী গাছ বিক্রি করেন এবং তাদের মাছের পোনার হ্যাচারীর সমস্ত পানির ট্যাংকি স্কুলের অফিস ভবনের ছাদে রাখার কারনে পুরো ভবনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া স্কুলের টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে হ্যাচারী, ফিসারী ও ধান ক্ষেতে ব্যবহার করে আসছেন।এমনকি স্কুলের জায়গার পরিমাণও সঠিক নেই । যতটুকু জায়গা বিদ্যমান আছে তার মধ্যেও অন্যর জমি স্কুলের নামে দেখানো হয়েছে, যাহা তদন্ত করলে সহজেই বের হয়ে আসবে। স্থানীয়রা জানান, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করে আসছেন। ফলে নানা বিষয়ে ক্ষোভের কারণে শিক্ষকরা প্রায় সময়ই নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন । গত বছরের মে-জুন মাসে সরকার কর্তৃক বরাদ্ধকৃত পাঁচ লক্ষ টাকা কোন কাজ না করে নিজেরা আত্নসাৎ করেন। পাশাপাশি স্কুলের আয়-ব্যয় ও অন্যান্য সরকারি অনুদানের টাকা স্কুলের উন্নয়নের জন্য যথাযথভাবে কাজ করেন নাই এবং স্কুলের টিনশেড ঘরটি নিজেদের ফার্ম ও ফিসারীর কাজে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার করে আসছেন। এ সময় উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম হিমেলসহ অনেকেই বিষয়টি তদন্তপূর্বক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা লিজা জানান, অভিভাবক বাচ্চু মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে গেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত ভাবে জবাব দিব।
সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর ও মোঃ মফিজ উদ্দিন জানান, বিদ্যালয় মাঠের তিনটি মেহগুনি গাছ কাটার কোন অনুমতি পত্র প্রধান শিক্ষিকা ও সভাপতি দেখাতে পারেনি, সরকারি বরাদ্দের ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করার কোন ভাউচারসহ অন্যান্য প্রমাণাদি হাজির করতে পারেনি। তিনি আরো জানান, তদন্তকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় মাছের হ্যাচারি ও ভবনে পানি ট্যাংকি দেখতে পাই। মাছের হ্যাচারি ও পানির ট্যাংকিগুলিসহ টিনশেড ঘরে রক্ষিত হ্যাচারীর মালামাল সরিয়ে নিবে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাহিদ ইভা জানান, স্কুলের অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিদল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে একটি খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.