তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার কৃষি অফিসে দুর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছে না। সম্প্রতি সময়ে একের পর এক দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলেও দুর্নীতি বেড়েই চলেছে এই অফিসে।
গত দুই মাসে তাড়াইলের কৃষি অফিসের দুর্নীতির সংবাদ দৈনিক দিনকাল, দৈনিক কিশোরগঞ্জ ও কালের নতুন সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলেও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্তাদের মন জয় করে ধামাচাপা দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যেই দুর্নীতি করে চলেছে তা দেখার যেন কেউ নেই। উল্লেখ্য যে তাড়াইলে সার ডিলারদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এ অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সরকারি ইউনিয়ন পরিষদের ভবনকে গুদামঘর দেখিয়ে সার ডিলারের ব্যাবসায় সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে তাড়াইল কৃষি অফিসের বিরুদ্ধে। এসব দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কৃষি অধিদপ্তরের বরং দুর্নীতিকে অর্থের বিনিময়ে বদলি করেই সমাপ্ত ঘটায় এই অধিদপ্তর। ফলে অবৈধভাবে কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী সরকারের আমলের ১৬ বছর এই অফিসে সুবিধা নেয়া দলীয় লোকজন থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরাও এখন ও নিবিঘ্নে অপরাধ করেই চলছে। অতীতের সেই দুর্নীতির কার্যকলাপ চলছেই। সোমবার তাড়াইল কৃষি অফিসে সরজমিনে গিয়ে তার সত্যতা পাওয়া গেছে।
কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে চলছে সরকারী বীজ অফিস প্রাঙ্গনেই কেনা বেচা। হাইব্রিড ধান (লাল তীর) সরকার কোম্পানি থেকে ২৮০ টাকা দরে কিনে কৃষকের মাঝে সম্পূর্ন ফ্রিতে কৃষকের নিকট বিতরন করছেন । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বীজ ব্যাবসায়ী বলেন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার মূল্য ৩০০-৩২০ টাকা মূল্যের বীজের প্যাকেটটি সুকৌশলে ১০০-১৫০ টাকা করে প্রকাশ্যে ক্রয় করছেন কালো বাজারি সিন্ডিকেট। বীজ বিক্রি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসার বিকাশ রায় বলেন, আমি নতুন তাড়াইলে যোগদান করেছি। যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবো। উল্লেখ্য যে তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের ভাগ বাটোয়ারা ও সিন্ডিকেটের কারনে সম্প্রতি সময়ে জাওয়ার ইউনিয়নের এস.এ.এ.ও এর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন অফিসের কয়েকজন। সোমবার তাড়াইল উপজেলা পরিষদের এলাকায় ৪৩০ জন কৃষকদের মাঝে, তালজাঙ্গা ইউনিয়নের ৪৩০ জন কৃষকদের মাঝে ও ধলা ইউনিয়নের ৪৩০ জন কৃষকদের মাঝে ২ কেজি করে বীজ বিতরন করার অনুষ্ঠান সকালে তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে উদ্ভোধন করা হয়েছে বলে দাবী করেন অফিস কতৃপক্ষ। কোন ধরনের অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। তবে এ প্রতিবেদকের ধারনকৃত ভিডিওতে প্রকাশ্যে অফিস প্রাঙ্গনেই বীজ উত্তোলন করে কালো বাজারে বিক্রি করার দৃশ্য দেখে বলেন প্রয়োজনে আমি পুলিশ মোতায়েন করে তা বিতরন করবো তবে যেন কালোবাজারিতে বিক্রি না হয় তার জন্য আমরা বিতরনকৃত বীজের প্যাকেট সুই দিয়ে ছিদ্র করে দিচ্ছি । তবে বীজ বিতরনের ১২৯০ জনের মধ্যে প্রকৃত কৃষক কতজন তার সঠিক হিসাব দিতে পারেনি তাড়াইল কৃষি অফিসের কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে তাড়াইল কৃষি সম্প্রসারন অফিসার নাজমুল
কায়সার উপস্থিত থেকে এ বীজ বিতরণ করার কথা থাকলেও বীজ বিতরনে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃত কৃষকরা এ অফিস থেকে কিছুই পায় না। অফিস সিন্ডিকেট ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নামধারী কৃষক সাজিয়ে হরিলুট করা হচ্ছে সরকারী মালামাল ও টাকা। এ বিষয়ে তাড়াইল কৃষি অফিসের দায়িত্বরত বিভিন্ন ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে থাকা প্রকৃত কৃষকের নামের তালিকা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। সেই সাথে ১২৯০ জন কৃষকের নিকট সরকারী ধানের বীজ বিতরন করার তালিকা দেখতে চাইলে তিনি তা অপরাগতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও এ অফিসে ১০ থেকে ১৫ বছর যাবত বিভিন্ন কর্মচারীদের চাকরিরত তালিকা চাইলে তিনি তাও দিতে পারেন নি। এসব অনিয়মের বিষয়ে অবগত ও জানার জন্য তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাড়াইলের কৃষি অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে কিশোরগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়েছে। বীজ বিতরনের তালিকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার সহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের কাছ থেকে তালিকা নেয়ায় প্রকৃত কৃষকদের অনেক সময়ই দেওয়া সম্ভব হয়না। তবে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীরা ৩ বছরের বেশি সময় থাকার নিয়ম নেই, যেহেতু কৃষকদের নিয়ে আমাদের কাজ তাই দীর্ঘ সময় থাকলেও তাদের বদলি করা হচ্ছে না।