নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পালের নেতৃত্বে নান্দাইলে প্রায় ১৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রেকর্ড পরিমাণ সরকারি জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। এনিয়ে শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই সরকারি কর্মকর্তা।
তবে উদ্ধারকৃত এসব জায়গায় নির্ধারিত সীমানায় স্থায়ীভাবে পিলার বসানো এবং কিছু সরকারি স্থাপনায় পার্ক বা খেলার মাঠ নির্মাণ করে দিলেই এর চমৎকার সুফল মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় সুযোগ পেলেই দখলকৃত এসব জায়গা আবারও বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন তারা।
জানা গেছে, গত বছরের ৩১ আগস্ট ২০২৩ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদান করেন অরুণ কৃষ্ণ পাল। যোগদানের পর থেকেই সততা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ৩৫ তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা। বিশেষ করে তিনি সরকারি জমি উদ্ধারের মাধ্যমে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাল্য বিবাহ, মাদক, জুয়া, নারী-নির্যাতন, সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাসহ সকল প্রশাসনিক কাজ দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল। এছাড়াও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তার সরব উপস্থিতি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান, যেকোনো বিষয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপজেলার বাইরেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন অরুণ কৃষ্ণ পাল। প্রায় ১৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সরকারী জমি উদ্ধারে বাদ যায়নি প্রভাবশালীরাও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল দায়িত্ব নেওয়ার তার নেতৃত্বে স্বল্প সময়েই বাসস্ট্যান্ড, খেলার মাঠ, বাজার, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন সরকারি জমি উদ্ধার হতে শুরু করে।
এখন পর্যন্ত নান্দাইল উপজেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ১৯ একর দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত কয়েক মাসে সদর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মেইন রাস্তার পাশে ৭৮ শতক (মূল্য প্রায় ২৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা), নান্দাইল চৌরাস্তায় ৩.৬ একর (মূল্য প্রায় ৫৪ কোটি টাকা), মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কানুরামপুর মোড়ে ১ একর আনুমানিক (মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা) চন্ডীপাশা নতুন বাজারে ২.৫ একর (মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা) সরকারি জমি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে সিংরইল এলাকায় ১ একর ৭০ শতাংশ (মূল্য ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা), চর বেতাগৈর ইউনিয়নের চর ভেলামারী এলাকায় প্রায় ১০ একর, (আনুমানিক মূল্য ২ কোটি টাকা), মোগরমহল (নান্দাইল বাজার) .৩ শতক জমি উদ্ধার করের, যার আনুমানিক মূল্য ৯০ লাখ টাকা।
এছাড়াও সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) উপজেলার বাকচান্দা আব্দুস সামাদ একাডেমি নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের .৪৫ শতক জমি উদ্ধার করে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া এসব অভিযানগুলোতে অন্যদের মধ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়জুর রহমান।
এছাড়াও নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (কিশোরগঞ্জ) ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (গ্রাম পুলিশ) উচ্ছেদ অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। এদিকে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে নান্দাইল প্রশাসনকে ধন্যবাদসহ সাধুবাদ জানান। একইসঙ্গে উদ্ধারকৃত এসব সরকারি জায়গা যেন আর কেউ কখনই দখল করতে না পারে, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান স্থানীয়রা।
মো. রফিকুল ইসলাম নামক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল নান্দাইলে আসার পর থেকে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে। তিনি শুধু শিক্ষাকেই গুরুত্ব দেননি, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ শারীরিক-মানসিক গঠনে নানারকম কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেন। তার নেতৃত্ব অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠসহ অসংখ্য খাস জমি উদ্ধার হয়েছে। এগুলোতে যদি পার্ক, খেলার মাঠ সহ সরকারিভাবে বিভিন্ন স্থাপনা করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা এর ব্যাপক সুফল পাবো বলে আশা করি। তিনি বলেন, নান্দাইলের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভয়ে থাকেন, কখন ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল চলে আসেন। যেকারণে ক্লাসে ছাত্র উপস্থিতিও ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। যদিও আমি নিজে একজন শিক্ষক, আমার কাছে তার এই কর্মকাণ্ডগুলো খুবই ইফেক্টিভ মনে হয়। তবে নান্দাইলে তার সবচেয়ে বড় ও সাহসী কাজ হলো দখল হওয়া কোটি কোটি টাকা সরকারি জমি উদ্ধার। প্রভাবশালীদের হুমকি-ধামকিও থামাতে পারেনি অরুণ কৃষ্ণ পালকে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে দখল হওয়া জমি উদ্ধার করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রভাবশালীদের হুমকি-ধামকির মোকাবেলা করতে হয় ইউএনওকে। এরপরও কেনো কিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে। কাজ চালিয়ে গেছেন আপন গতিতে, যার ফলে অল্প সময়েই জয় করে নিয়েছেন উপজেলাবাসীদের মন।
আব্দুর রহিম নামক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, নিজ জায়গায় দোকান করে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু গত ৮/১০ বছরের রাস্তার পাশের সব জায়গা দখল করে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে উঠেছিল, যার ফলে আমি পড়ে গিয়েছিলাম একেবারেই পেছনের দিকে তাই দিন দিন আমার ব্যবসা অবনতির দিকে যাচ্ছিল। আর দখলকারীরা এই দিনগুলোতে আঙুল ফুল কলা গাছ হয়েছে। ইউএনওর নেতৃত্বে অবৈধ সব দোকানপাট ভেঙে ফেলায় এবার স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময়েও তিনি বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাত্তা দেননি। তাদের মাধ্যমে দখলকৃত অসংখ্য জায়গাও দখলমুক্ত করা হয়েছে। যদিও এসব কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক ভয়-ভীতি, হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন যদি এমন জনবান্ধব হয়, তাহলে তার ফল আমরা সাধারণ মানুষরাই সবসময় পাবো।
নান্দাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল ও নান্দাইল সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবি সিদ্দিক খসরু বলেন, স্বাধীনতার পর নান্দাইলে রেকর্ড পরিমাণ সরকারি জায়গা বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের নেতৃত্বে দখলমুক্ত বা উদ্ধার হয়েছে। এই জন্য ধন্যবাদ জানাই ইউএনওকে।
তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকৃত সরকারি জায়গায় সর্ব সাধারণের জন্য যাত্রী ছাউনি ও খোলা জায়গায় যানবাহন স্ট্যান্ড নির্মাণ অথবা সরকারের পক্ষ থেকে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণের জোর দাবি জানাই। এদিকে উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, আমি নান্দাইলে যোগদানের পর সরকারি জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করি, তখন সাবেক দুইবারের এমপি তুহিন এবং পরবর্তীতে একজন মন্ত্রীর অধিনে কাজ করতে হয়েছে। এখন আবার অন্তরবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে, এভাবে বার বার ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার মধ্যেও ব্যালেন্স করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা আমার পক্ষে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপর আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই কাজগুলো করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সরকারি জায়গায়গুলো যারা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে, তারা সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই হয়ে থাকে। তবে আমি যতদিন আছি সরকারি জায়গাতে কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। যদি কেউ পুনরায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা হতে পারে। আমার এই উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2024 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.