শিক্ষকদের সমকালীন জীবন মান
ও কিছু কথা !
সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে
প্রতিটি অভিভাবক সন্তানের অনাগত ভবিষ্যৎ গঠনের লক্ষ্য নানা পরিকল্পনা করে থাকেন। সে ভাবে সন্মানিত অভিভাবক সম্প্রদায় শৈশব কালীন সময় থেকে শিক্ষা অনেকাংশে শিক্ষক নির্ভর হয়ে উঠে। পরবর্তীতে একটা নির্দিষ্ট বয়সে বিদ্যালয়ে গমন করে। এর পুর্ব পর্যন্ত নিজ কিংবা টিউটরদের মাধ্যমে বর্ণ পরিচয়ের কাজ চলে। আস্তে আস্তে হাটি হাটি পা পা করে বেড়ে উঠে এ উর্বর পলি মাটিতে। শুরু হয় মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিতে নিত্য পদার্পণ। অবুঝ শিশুকে কোলেপিঠে করে
একজন আর্দশ মানুষ গড়ে তোলার দায়িত্বে নিয়োজিত হন সন্মানিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা গুরু। পরবর্তীতে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে মহাবিদ্যালয়।
এ স্তর গুলো পেরোতে জাতি গড়ার কারিগরদের অবদান সর্বাগ্রে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ দুরহ কাজটা সম্পাদন করতে সন্মানিত শিক্ষক সমাজকে কী পরিমাণ মেধা ও শ্রম বিকাতে হয় তা কি রাষ্ট্র যন্ত্র পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ? নিশ্চয় নয়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরোলে ও এদেশে গুটিকয়েক জন থেকে বর্তমানে হাজার হাজার কোটি পতির উৎপত্তি হয়েছে।
কীভাবে এ সম্পদ অর্জিত হয়েছে তাও ওয়াকিবহাল। কিন্তু যাদের হাতেখড়ি শিক্ষা পেয়ে আজকে বড়বড় পদে আসীন হয়েছেন এবং দেশবিদেশে আলিশান প্রাসাদের মালিক হয়েছেন, তারা কি শিক্ষক সম্প্রদায়ের কথা কিঞ্চিৎ ভেবে দেখেছেন ? যে দেশের বিসিএস ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত হতো আবেদ আলীদের হাতে হাই প্রোফাইলদের অফিসের পিয়ন কেরানিরা শতশত কোটি টাকার মালিক। সর্বদা হাকাত বিমান, পাশ্চাত্য দেশ গুলোতে শিক্ষকদের জীবন মান সর্বাগ্রে। যাদের চিন্তা চেতনায় জাতি ফিরে পায় ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারক কারিগর আর এ সমাজ যে আজকে অর্থের অভাবে কতটুকু নির্যাতিত নিগৃহিত তার পরিসংখ্যান আঁতকে উঠার মতো। কীভাবে নামকাওয়াস্তে মাইনে দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন নামের অথৈ সাগর পাড়ি দিতে হচ্ছে তা ভুক্তভোগী সমাজ হারে হারে টের পাচ্ছে।
শিক্ষা ও শিক্ষক সম্প্রদায় দুমড়ে মুচড়ে খান খান হয়ে পড়ছে।
অথচ শিক্ষকদের জীবন মানোন্নয়নে আই এম এফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সহ বিভিন্ন এজেন্সি গুলো প্রেসক্রিপশন দিলেও সংশ্লিষ্ট দফতর সক্ষমতার হেতু দেখিয়ে তা আর আলোর মুখ দেখেনি,,,
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্য পণ্যে দাম কিন্তু নাম মাত্র ফিক্সড কটা টাকা শুধু বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে না সন্মানিত শিক্ষক সমাজকে আত্নহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ পেশাকে আজকাল অনেকেই ধিক্কার জানাচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণ এখন সময়ের দাবী। শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়ন রাষ্ট্র যন্ত্রের কোন ব্যয় নয় কেননা এটা একটা মহান পেশা। যেখানে জাতি গড়ার কারিগর ইচ্ছে করলেই যেকোনো কাজ করতে
পারেনা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় লাল ফিতায় বন্দী
শিক্ষকদের ভাগ্যে। যারা বারবার মিথ্যা আশার বাণী শুনিয়ে রাজপথ থেকে ফিরিয়ে এনেছে কিন্তু বাস্তবে ধোকা আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথিকীকরণ হয়েছে। এবার অন্তরবর্তী কালীন সরকারের মাধ্যমে শিক্ষকদের জীবন মানের বৈষম্য দূরীকরণ হয়ে জাতি কলংক মুক্ত হবে এটা সময়ের দাবী ।
লেখক : মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বাবুল,
সহকারী অধ্যাপক ( ইংরেজি) ও
সিনিয়র সহ সভাপতি, নান্দাইল প্রেসক্লাব।