ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাত্র ৮০ টাকা রোজে লোড-আনলোডের শ্রমিক থেকে শ্রমিক লীগ নেতা বনে যাওয়া মোকারম সরদার এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। অভিযোগ উঠেছে আরব্য উপন্যাসের জাদুকরি সেই আলাদীনের চেরাগের মতোই রাতারাতি এত টাকার মালিক বনে যাওয়ার পেছনে রয়েছে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের ছত্রছায়া।
অনেকের ধারণা হারুন অর রশিদের অবৈধ সম্পদের কেয়ারটেকার মোকারম সরদার। বিষয়টি কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জানাজানি হলে মোকারম সরদার আত্মগোপন করেন।
স্থানীয়রা জানান, আলোচিত সমালোচিত সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ তার অবৈধ টাকার কেয়ারটেকার মোকারম সরদারকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে বিপুল পরিমাণ টাকা ছিটিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ- যার কোনো শিক্ষা নেই, নিজের নাম লিখতে পারে কোনোমতে, তিনি কোনোভাবেই উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের চেয়ারম্যান হতে পারেন না। তাকে চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে অবৈধ সম্পদ পাহারা দেওয়ার জন্য। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকায় সরেজমিন জানা যায়, বুড়িগঙ্গায় জাহাজ থেকে লোড-আনলোডের সময় চুরি করে রাখা চাল, ডাল, গম, পাথর, কয়লা সার বিক্রি করতেন মোকারম সরদার। তার রয়েছে জাহাজের পণ্যচোরাই সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট থেকে মোকারম সরদার যে পরিমাণের টাকা আয় করতেন তার অর্ধেক স্থানীয় নেতাদের ভাগ দিতে হতো।
স্থানীয়রা জানান, হারুন অর রশিদ নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে থাকাকালে প্রায়ই আলীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোকারম সরদারের লেবার অফিসে সময় দিতেন। দীর্ঘ সময় মোকারম ও হারুনকে লেবার অফিসে বসে টাকাপয়সার হিসাব করতে দেখেছেন। এরপরই আলীগঞ্জ এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি প্লট কিনেন মোকারম সরদার। এর মধ্যে ৪টি বহুতল বিলাস বহুল বাড়ি করেছেন। অনেকেই এসব বাড়িকে এসপির বাড়ি নামে চিনেন।
কিশোরগঞ্জের স্থানীয় লোকজন জানান, কিশোরগঞ্জের উকিলপাড়াতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন মোকারম সরদার। নিকলীর দামপাড়া মৌজায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে এতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স ভবন করেছেন। এলাকার রইস মেম্বারের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন। ভৈরব বাজার পূবালী ব্যাংকের নামে কোটি টাকার একটি নিশান পেট্রল জিপ ক্রয় করেন। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইভটিজিং নামের একটি ছবি প্রযোজনা করেন মোকারম।
নিকলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোকারম সরদারের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন- তিনি স্বশিক্ষিত, তার কোনো ঋণ নেই। বাড়ি ভাড়া থেকে ৯০ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা বছরে আয় হয়। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে দুই কোটি বিশ লাখ ৯০ হাজার ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার। এছাড়া দামপাড়া মৌজায় দেড় শতাংশ, কিশোরগঞ্জ মৌজায় আড়াই শতাংশ, ভিন্নগাঁও মৌজায় ১২ শতাংশ ৩ পয়েন্ট এবং একই মৌজায় রয়েছে ৭০ শতাংশ জমি। স্থানীয়দের অভিযোগ নির্বাচনি হলফনামায় মোকারম সরদার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
এ বিষয়ে মোকারম সরদারের বক্তব্য নিতে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ ও ফতুল্লার একাধিক বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহার করা দুটি নম্বরে ফোন করে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2024 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.