ডেস্ক রিপোর্ট :
‘নাতিডাই আমারে খাওয়ায়-রাখে, আমার এহন কী হইবো’
নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা জনু বেগম
আদালত চত্বরে বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন বৃদ্ধা জনু বেগম (৬৮)৷ বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে একপর্যায়ে মাটিতে বসে পড়লেন। কিছুতেই কান্না থামছিল না তার। ততোক্ষণে তার আশপাশে বেশ ভিড় জমে গেছে। জনু বেগমের নাতি রাজমিস্ত্রি আরিফ হোসেনকে (১৯) গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) পুলিশ ধরে এনে নাশকতার মামলা দিয়েছে। আরিফকে নির্দোষ দাবি করে এই বৃদ্ধার চিৎকার ও আহাজারি সেখানে উপস্থিত অনেকেরই চোখ ভিজিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় এখন এমন দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনের। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতা-সহিংসতা, লুটপাটের বেশ কিছু ঘটনায় জেলার ৭টি থানাতেই একের পর এক দায়ের হচ্ছে মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও তাই বাড়ছেই।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার আগেই কাকডাকা ভোরে আদালত চত্বরে উপস্থিত হচ্ছেন স্বজনরা। প্রিয়মুখকে এক পলক দেখতে ও মুক্তির ব্যবস্থা করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের এই বুক দুরু দুরু প্রতীক্ষা। কোথাও মা দাঁড়িয়ে আছেন সন্তানের জন্য, কোথাও নাতির জন্য দাদির বুক ফাটা আর্তনাদ, আবার কোথাও সন্তানের জন্য এক কোনায় দাঁড়িয়ে চোখের জল আড়াল করে শক্ত হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত বাবা। তাদের প্রত্যেকের গল্প ভিন্ন হলেও দিনশেষে একটি জায়গায় প্রায় সবারই ভীষণ মিল। কারোরই প্রিয়জনের জামিন মিলছে না, তাই দিনশেষে একরাশ হতাশা, অনিশ্চয়তা আর ক্লান্তি নিয়ে সকলকেই ফিরতে হচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে। সেইসঙ্গে থাকছে পরবর্তী দিনগুলোতে জামিনের জন্য সংগ্রামের চিন্তা।
গারদের সামনে জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু নামে এক নারী বারবার চোখ মুছছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। মিতুর স্বামী হোসাইন মাহমুদ (২৬) একজন পাঠাও চালক। তাকে একনজর দেখার জন্য কোলের শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মিতু।
ফতুল্লার ভূঁইগড়ের বাসিন্দা মিতু বলেন, কোটা আন্দোলনের কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে তার স্বামী বাসায় ছিলেন। এরই মধ্যে ছোট্ট শিশুর খাবার দুধ শেষ। প্রতি সপ্তাহে এক প্যাকেট দুধ লাগে। আর বাসায় টাকা নেই যে দুধ কিনে আনবে। তখন আমার স্বামী বললেন, এখন তো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক, দুই-তিনটা ট্রিপ মেরে ছেলের জন্য দুধ কিনে নিয়ে আসি। রাত ৯টার দিকে বাসায় ফেরার পথে ভূঁইগড় রূপায়ণের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে আসে। শুনেছি তাকে নাকি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজকে তার জামিন চাওয়া হলেও আদালত দেন নাই।
তিনি আরও বলেন, আপনারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটি জেলখানায়। কবে জামিন পাবে তাও জানি না। আমি এখন আমার দুধের বাচ্চা ও অন্ধ শাশুড়িকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
একইভাবে মামলার আসামি হয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পরশমদী গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রি আরিফ হোসেন। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোনারগাঁ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গারদের সামনে মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে করতে আরিফ হোসেনের নানি জনু বেগম বলেন, ‘আমার নাতি রাজমিস্ত্রির কাম করে বাবা। আমি অসুস্থ মানুষ। নাতিডাই আমারে রাখে, খাওয়ায়। আমার এখন কী হইবো। বউ আর ছয় মাসের একটা বাচ্চাও আছে আরিফের। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কাজ শেষে বাড়িতে ফেরে। খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়েও পড়ে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি পুলিশকে কাকুতি-মিনতি করে বলছি, আমার নাতি রাজমিস্ত্রির কাম করে, ও কোনো দল করে না, কিন্তু তারা আমার কথাটাও শুনলো না। আমার নাতিরে ধরে এনে নাশকতার মামলা দিল। যারা আমার নিরপরাধ নাতিকে বিনা দোষে দোষী করল, আল্লাহ তুমি এদের বিচার কইরো।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2024 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.