কিশোরগঞ্জে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরাশিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আবারও মামলার জালে আটকে গেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রায় সব নেতা-কর্মী এখন আত্মগোপনে। বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দাবি, অনেক নেতা-কর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন, তাই আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া নাশকতাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে।
বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়। বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মিছিলও করা হয়। এরপর থেকে অনেক নেতার ফোন বন্ধ রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর রহমানকে সংঘর্ষের আগে ও পরে কোথাও পাওয়া যায়নি। উনি কিশোরগঞ্জে থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজলের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী তৎপর হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। অধিকাংশ নেতা-কর্মী তখন অবস্থান নেননি।
বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমরা তাঁদের সমর্থন জানিয়েছিলাম। এটাই আমাদের অপরাধ। এখন রাতবিরাতে আমাদের বাসায় পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে। তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের চার উপজেলায় মোট চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৯৬৬ জনকে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮২ জন।
জামায়াতের জেলা আমির মো. রমজান আলী বলেন, ‘ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে সমর্থন দিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দিনে-রাতে বাসায় অভিযান চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি জালাল উদ্দীন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে আপাতত কৌশলগত কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ছাত্রদের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি বিএনপির সমর্থন দেওয়ার কারণে সরকার বিভিন্ন পরিস্থিতির দায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর চাপিয়ে মামলা দিচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালাচ্ছে।’
জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আইনজীবী ফয়জুল করিম মবিন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার অপরাজনীতি শুরু করেছে সরকার। এতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এক দল এক নেতার শাসন কায়েমে বদ্ধপরিকর সরকার।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বলেন, ‘সংগঠন তো আবেগ-অনুভূতির জায়গা। আমরা বেতন নিয়ে সংগঠন করি না। সংগঠন ভালোবাসার জায়গা। সংগঠন করে শুধু সুবিধা নিবে আর বিপদে মাঠে থাকবে না, তা তো হওয়া উচিত না। ওই পরিস্থিতিতে সবারই মাঠে থাকার দরকার ছিল, কিন্তু অধিকাংশ নেতা-কর্মী মাঠে থাকেনি।’