অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
হাওরের নিজস্ব নানা সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্যে সমুন্নত কিশোরগঞ্জের ভাটির রানী খ্যাত উপজেলা অষ্টগ্রাম। তেমনি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রায় দেড়শত বছর জুড়ে হাওরের মানুষ সাংস্কৃতিক আবহে পালন করে আসছে মহরম উৎসব । প্রতিবছর পহেলা মহরম থেকে ১২ই মহরম পর্যন্ত অষ্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে এ মহরম অনুষ্ঠান । অষ্টগ্রামের প্রায় মহল্লাতে একটি করে মহরমের স্থায়ী দরগাহ রয়েছে যাকে মোকাম বলা হয়। প্রতিটি মোকামে থাকে একজন খাদেম। মহরমের সময় মোকামগুলো সাজানো হয়। মোকামের চারদিকে উড়ানো হয় নিশান। সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় মোমবাতি, আর চড়া সুরে বাজানো হয় ঢংকা। ঢংকার সুর শুনে রোজাদাররা ইফতার করেন। দিন থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কারবালার জারি, শোক ও মাতম। সেই সাথে জারিয়ালদল হায় হোসাইন, হায় হোসাইন ধ্বনিতে মরসিয়া মারতে থাকেন। ১০শে মহরম প্রতিটি এলাকা থেকে মাতম করতে করতে বড় বড় তলোয়ার, বল্লম,তরবারি
, বর্শা,ঢাক ঢোল, বাঁশি ও সানাই ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রসহ অষ্টগ্রাম কারবালা ময়দানে তাবুত, জুলজুল, তাজিয়া উৎসর্গ করেন। সন্ধ্যার পর সবাই সেখান থেকে চলে আসেন,কারণ অষ্টগ্রামবাসী বিশ্বাস করেন রাত ৮টার পর জ্বীনরা এসে কারবালা মাঠে মাতম করেন। তাছাড়া এ মহরম পালনকারীরা মহরম শুরু থেকেই খাট পালং কেউ ব্যবহার করেন না,মাটিতে আসন গ্রহণ বা শয্যা পাতেন । দিনে তারা রোজা রাখেন, বয়স্ক পুরুষরা চুল দাড়ি ছাঁটেন না। কেউ জুতা পায়ে দেন না ,নখ কাটেন না, ভালো পোশাক পরিধান করেন না, সবাই নিরামিষ ভোজন করেন । জানা যায়-অষ্টগ্রাম পুরনো জমিদার বাড়ি ‘হাবিলি বাড়ি’কে কেন্দ্র করেই পালিত হয় এ মহরম। জনশ্রুতি আছে এ জমিদার পরিবারের একজন উত্তরাধিকারী আলাই মিয়া বা সৈয়দ আব্দুল করিমের সময় ১৮৩৬ সনে ইংরেজ সরকার বাকি খাজনার দায়ে জমিদারি বাজেয়াপ্ত করেন । আলাই মিয়া তখন সংসার ত্যাগ করে বিরাগী হন এবং পরবর্তীকালে সাধক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। সাধক খ্যাতি লাভের পর তিনি জমিদার বাড়িতে ফিরে আসেন এবং বাড়ির আঙ্গিনায় স্থাপন করেন একটি ইমামবাড়া। সেই থেকে অষ্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় মহরমকে কেন্দ্র করে এ স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান পালিত হয়। অষ্টগ্রামে শিয়া সম্প্রদায় না থাকলেও সুন্নি মুসলমানরাই এ অনুষ্ঠান পালন করেন।