অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগম
প্রতিদিন প্রতিক্ষন গ্লোবাল বিশ্বের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, মানবতার অবক্ষয় দেখে চোখ কপালে ওঠে যায়। মানবতার বুক পিঠ খেয়ে ফেলছি আমরা নীতিহীন, নির্দয় আচার আচরণ দ্বারা। সভ্যতা যত উন্নত হচ্ছে তত আমরা নির্দয়তা, পাপ, পংকিল পথে পা রাখছি। ঘরে বাইরে কেউ কেউ রাম রাজত্ব কায়েম করছি। অপর পক্ষে কেউ কেউ নিষ্টুরতার গালে হাত রেখে ভাবছি--চার পাশে মানবিক মূল্য বোধ পচেঁ গলে কি হচ্ছে।কেন পঁচা নর্দমায় নেমে যাচ্ছে সমাজ,সমাজভুক্ত মানুষ।মানুষের বিবেক বোধ হচ্ছে তিক্ত, বিষাক্ত, নির্দয়। দয়ার নদী শুকিয়ে যাচ্ছে কেন?
বিশ্ব মোড়লরাই বা কি দাবার গুটি চালছে। মহা শক্তিধরদের বুকে কি দয়া মায়ার চাষ হয় না?। কেন বিশ্বের এপ্রান্তে ওপান্তে যুদ্ধের লড়াই সর্বদা লেগে আছে।মানব রক্তে তলিয়ে যাচ্ছে মানবতার জনপদ।নেই কি এর সমাধান। এখানে প্রশ্ন হলো- কে বাঁধবে বিড়ালের গলায় ঘন্টি। হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে নেমে আসবে সার্থহীন সমতলে। তারপরও আমরা চাই শান্তি। প্রত্যাশা রাখি শুভ বোধের উদয় হউক বিশ্ব পরিমন্ডলে। চাঁদ তুমি সাক্ষী হয়ে দেখে রেখো কে কত হিংস্র, নমনীয়,মানবীয়,ভালোবাসা প্রেমি। সভ্যতার দাঁত নখ যৌক্তিক সময়ে দেবে তার জবাব।
শান্তি শান্তি শান্তির ফুল ফুটাতে চাই আমরা সবাই। এই নির্মল শান্তির জন্যই যত্রতত্র অশান্তির আগুন জ্বলছে । আসুন আমরা শান্তির মা'কে খুঁজ তে শুরু করি নিজের ঘর বা পরিবার থেকে। সেখানে এই নিরেট সুস্বাদু বস্তুটি কি আছে? না,বেশীর ভাগ পরিবারেই নেই সুখ।বরং সম্পর্কের উত্তপ্ত হাওয়া ঘুরাঘুরি করে। সুখ দরজা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় বা যেতে চায়। বাবা, মা, সন্তানদের মধ্যে চলে সার্থের দড়ি টানাটানি। কখনও বাবা, মা'কে আশ্রয় নিতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে অথবা থালা হাতে নিয়ে নেমে যেতে হয় রাস্তায়। আজকাল এ তো নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা ঘটছে। এমন কি খুনাখুনির ঘটনাও ঘটে। আমরা কি তা হলে সৃষ্টির সেরা জীব নই।
পরিবারের পর ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা,জিলা,বিভাগ অতিক্রম করে জাতীয় সমাজ কাঠমোতে যদি যাই, সব জায়গারই চিত্রপট এক রকম। ধর্মীয়,রাষ্ট্রীয়, সামাজিক,মানবিক বহু বিধিবিধান রয়েছে মানব জীবনকে সুশৃঙ্খল করার জন্য। রাখা হয়েছে বিধি বিধান লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান। কিন্তু আমরা কি পারছি সর্বক্ষেত্রে মানবিক আইনের শাসন প্রয়োগ করে চন্দনের সুগন্ধি ছড়িয়ে দিতে। পারছিনা বলেই কোর্টের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে বিচার প্রত্যাশিরা জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুপথ যাত্রী রুগীরা সুচিকিৎসার জন্য করছে উ আ। বাজার ঘুরে খালি হাতে ঘরে ফিরছে তৃণমূলের জনগণ। নারীরা হচ্ছে ধর্ষিত,অমূল্যায়িত,নির্যাতিত। দেশের জাতীয় উন্নয়ন আকাশ চুম্বি হলেও মানবীয় পরিবেশ হচ্ছে বিষাক্ত। এর জন্য দায়ী কে? দায়ী সার্থবাদী আমরা, নষ্টের কষ্টে ভেসে যাচ্ছি।
ঘটাচ্ছি জঙ্গীবাদ, লুটপাট,সন্ত্রাসি,অপরকে অবদমন,ঠকবাজী, ভূমি খেকুর আদিপত্য, দূর্নীতি, অনিয়মের প্রচলন ইত্যাদি মানবতা বিরুধী কাজের বিস্তৃতি। কে কাকে বলবে কি,বরং নীতিহীনতার কারনে উর্ধ্ব আকাশের দিকে তাকিয়ে করছি আহাজারি। যারা একটু চালাক, শিক্ষিত,সুদুর প্রসারি চিন্তা ভাবনা করে, তারা লেজ গুটিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বিত্তশালীরা সেকেন্ড হোম গড়ছে
বেগম পাড়া বা অন্য কোথাও বিলাস বহুল দেশে। পাসপোর্টে লাগিয়ে রাখছে বিদেশ গমনের ভিসা।বিপদের সংকেত পেলেই রাতের আঁধারে ওঠে যাবে বা যাচ্ছে বিমানে। তাদের মনে প্রানে দেশ প্রেমের ছিটে ফোটা দরদও নেই। এদেরকে কে দেবে মানবতার মহৌষধ। আমি নিজেও সে ব্যর্থতার কারাগারে বন্দি।
বাংলাদেশে মরনব্যাধি দুর্নীতি, ঘোষখোরদের চলছে মহোৎসব। দেশের সিঁধ কেটে রাজভান্ডার খালি করে বিদেশে টাকা পাচার করছে। তার টাকা সে করবে যা ইচ্ছা তা। কিন্তু এই টাকা কোথা থেকে আসছে , আবার যাচ্ছেই বা কোন সুরঙ্গ পথ দিয়ে,কোথায়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তা তো জানার অধিকার রাখি। কেন না, এ তো সকল জনগণের শ্রম ঘামের টাকা। এই জানা জানি করতে গিয়ে, তার মানে কেঁচো খোড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসে। কে বা কারা করছে লুটপাট তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। সেই চিহ্নিত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীরা লেপ কম্পলে মুখ ঢেকে সুইয়ের মত হারিয়ে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। যাত্রা পথে তাদের চেহারা সনাক্তকারীরা দেখেও না দেখার ভান করছে। এটাই তো আমাদের ব্যর্থতা।
তাদের রমরমা কারুকার্য আঁকা দুর্নীতির কিৎসা কাহিনী নিয়ে প্রতিদিন টিভি চ্যানেলগুলেতে ওঠছে রমরমা টকসোর ঝড়।কেউ কেউ পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। কিন্তু দেশের বা দশের সার্থে ফলাফল বেরিয়ে আসছে জিরো? আমরা বোকা গর্দভরা তা দেখছি ও শুনছি,মাথায় রাখছি হাত। চায়ের টেবিলে, হাটে, বাজারে, টং দোকানে হচ্ছে জমজমাট রসালো গল্প গুজব। এর জন্যই কি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ করে একাত্তরে দেশটাকে স্বাধীন করা হয়েছিলো।
পরিশেষে বলবো -- বিপুল সফলতার পর বাংলাদেশের সামনে গোলপোস্ট হলো স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন। উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করা। স্বপ্নের ঘরে ফুল ফুটাতে হলে সম্পদ লুন্ঠনকারীদের চোখে মানবতার রাখী বন্ধন পরাতে হবে। কিন্তু সে দায়িত্বটি পালন করবে কে? আমরা দশে মিলে সচেতন হলে সব অসম্ভবকে করা যাবে সম্ভব।জয় হবে মানবতার।
লেখকঃ কবি,কলামিস্ট,সাবেক সিনেটর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ০১৭১৭৭৬২৭৪৫.
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.