সঞ্জিত চন্দ্র শীল
*অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার;
*স্থানীয় মৎস্য বিভাগের নিরবতায় অসাধু শিকারিরা অধরা
*বিলের মাঝে অপরিকল্পিত ফিসারী স্থাপন;
দেশে শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই পানিতে চারদিক থৈ থৈ।খালে-বিলে বর্ষার নতুন পানিতে দেখা মেলে দেশীয় প্রজাতির নানান জাতের মাছ। এ বর্ষাতেও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার খালে-বিলে তেমন দেখা মিলছে না দেশীয় প্রজাতির মাছের৷ বিপজ্জনক চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহারে খালে বিলে কমে যাচ্ছে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ।
জানা যায়,এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশীর ভাগ এলাকাই খাল-বিলের দখলে। বর্ষা হলেই এসব খাল-বিল পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আর সেসময় নতুন পানিতে দেশীয় প্রজাতির নানান জাতের মাছ ধরতো মৎস্য শিকারীরা। গত ১০ বছর আগেও এ উপজেলায় মাছ ধরার জন্য দেশীয় ফাঁদ ব্যবহার করা হতো। ছাই,ফলো,ঠেলা জাল,বর্শি ইত্যাদি ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার গেলে এতে মাছের কমে যাওয়া নিয়ে সংশয় ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল মাছের বংশ বিস্তার নি:শেষ করে দিচ্ছে।
গত কয়েকদিনে সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অসাধু শিকারীরা নিজেদের খাওয়া ও বিক্রয়ের জন্য কারেন্ট জাল এবং চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করা এক মৎস্য শিকারী জানান,এ জালে যেকোনো মাছের পাশাপাশি সাপ,ব্যাঙের পাশাপাশি অন্যান্য জলজ প্রাণী ধরা দেয়। খালে-বিলে নতুন পানি আসলেই তারা এ জাল ব্যবহার করেন বলেও জানান তিনি।
সুত্রমতে, কয়েক দশক আগেও এ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় আড়াইশ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ছিল। মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতায় এসব মাছের অনেক প্রজাতি এখন আর চোখে পড়ে না। বর্ষা মৌসুমে নদী, খাল, বিল থেকে কারেন্ট জাল দিয়ে ব্যাপক হারে ডিমওয়ালা মাছ ধরার কারণে দেশি মিঠা পানির মাছের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা মৎস্যজীবী লীগ নেতা মুসলেহ উদ্দিন মুসলিম জানান, গত ১০-১৫ বছর আগেও মাছ ধরার ছাই ব্যবহার করে ২-৩ ঘন্টায় যে পরিমান মাছ পাওয়া যেতো তা দিয়ে দুইবার তরকারী খাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে খালে বিলে মাছই নেই। কারেন্ট জাল ও চায়না জালে সব মাছ ধরা পড়ে যায়৷ ফলে মাছের বংশ বৃদ্ধিই হচ্ছে না।
দেশীয় প্রজাতির মাছের হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মমতাজ জিন্নাত সাগর বলেন, বিভিন্ন কারণেই দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মানুষের সচেতনতার অভাবও রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ রক্ষায় এখন ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, এ উপজেলায় গভীর খাল-বিলের সংখ্যা কম। এছাড়া শুকনো মৌসুমে এগুলোতে পানি না থাকা দেশী প্রজাতির মাছ কমে যাওয়ার একটি কারন৷ অভিযানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের ব্যাপারে নিয়মিতি অভিযান পরিচালনা করে এগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।