প্রেস ব্রিফিং:
বাংলার মুক্তিকামী মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ট নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন, গৃহহীন, অসহায়, অসচ্ছল, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের নিমিত্ত এক মহতী কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের পর ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল-অসহায় মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।
তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপর্যন্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং সকল গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। যার ফলে ১৯৯৭ সালে “আশ্রয়ণ” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা “মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন ৫ম পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট বরাদ্দকৃত গৃহের সংখ্যা ১৩৯৮৫টি, যার মধ্যে গত ১৪/১১/২০২৩ তারিখে ১ম ধাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৩০৫০টি গৃহ উদ্বোধন করা হয়। ৫ম পর্যায়ে অবশিষ্ট ১০৯৩৫টি একক গৃহ, যার মধ্যে (২য় পর্যায়ে) ৯৮৪১টি এককগৃহ এবং জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপনপূর্বক অবশিষ্ট ৯৫২৯টি, যার মধ্যে একক গৃহ ৮৭২৫টি মোট ১৮৫৬৬টি গৃহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১১/০৬/২০২৪ তারিখ ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ২য় ধাপে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন এবং ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ গৃহের কবুলিয়ত দলিল, নামজারী, গৃহ প্রদানের সনদ, ডিসিআর কপি ও ঘরের চাবি প্রদান করবেন। কিশোরগঞ্জ জেলায় মোট বরাদ্দকৃত গৃহের সংখ্যা-২৮৪০টি। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম পর্যায়ের ১ম ধাপসহ মোট উদ্বোধনকৃত গৃহের সংখ্যা-২৭৯০টি। ৫ম পর্যায়ে (২য় ধাপে) অবশিষ্ট ৫০টি গৃহ (হোসেনপুর উপজেলায়-১৪টি, নিকলী উপজেলায়-০১টি, বাজিতপুর উপজেলায়-২০টি, তাড়াইল উপজেলায়- ১৫টি) এবং পুরাতন জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপনপূর্বক একক গৃহ ভৈরব উপজেলায় ১৬০টি ও কুলিয়ারচর উপজেলায় ১২০টি মোট ২৮০টি গৃহ আগামী ১১/০৬/২০২৪ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলা (কিশোরগঞ্জ সদর, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, ভৈরব, অষ্টগ্রাম, হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, নিকলী, মিঠামইন, ইটনা ও তাড়াইল)-কে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে।
সারা দেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জ জেলাতেও ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্বে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে উক্ত কর্মযজ্ঞের সামগ্রিক কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। প্রত্যেক উপজেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘরগুলো স্থানীয় গ্রোথ সেন্টার এর নিকটবর্তী স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভূমিহীন-গৃহহীন ব্যক্তিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রের সুযোগ সুবিধাসমূহ সহজলভ্য হয়। ইতোমধ্যে ঘরসমূহে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে টিউবয়েল স্থাপন করা হয়েছে। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদিত প্রাক্কলন ও ডিজাইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুনগতমান বজায় রেখে নির্মাণ কাজ সুসম্পন্ন করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলমান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তালিকা মোতাবেক যে সকল উপজেলা ইতোমধ্যে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষিত হয়েছে সে সকল উপজেলায় যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনভাবে আরও কোন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার থেকে থাকে তাদেরকেও বিধি মোতাবেক পুনর্বাসনের