নিজস্ব প্রতিনিধি
: কিশোরগঞ্জে বৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পাশাপাশি অবৈধ ডায়াগনস্টিকের ছড়াছড়ি ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ খরছ ও ভোগান্তির বেড়াজালে বন্ধী রোগীসহ আত্বীয় স্বজনরা।
কিশোরগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার নামে প্রতারণার অভিযোগটি
কিশোরগঞ্জে দিনের পর দিন রোগীরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে দৃশ্যমান অভিযোগ উঠেছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি হাসপাতালের সামনেই চলছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কিশোরগঞ্জ সচেতন মহলের দাবি কিশোরগঞ্জে বৈধ ডায়াগনস্টিকের পাশে অবৈধ ডায়াগনষ্টিকের সিন্ডিকেটের ফলে এমন দূর্দশা। প্রতারিত রোগীদের মাঝে ভোগান্তিসহ ১ মাসে একই ক্লিনিকে ২ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ থাকলেও কোন সুফল পাচ্ছে না রোগীর স্বজনরা ।
স্থানীয় সিন্ডিকেট ও দালালসহ প্রভাবশালীদের যোগ সাজেশে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়ে থাকে এসব ঘটনা ফলে কোন মামলা বা তদন্তের মুখে পড়তে হয় না ক্লিনিক মালিকদের তাই বাড়ছে ক্লিনিকে দুঘর্টনায় ভোগান্তি ও অর্থসহ প্রিয় মুখের মৃত্যু হলেও নিরুপায় রোগীর আত্মীয় স্বজন।
গত ১ মাসে কিশোরগঞ্জ পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু হয়েছে ২ নারীর। তার মাঝে শোলাকিয়া এলাকার মাটি ১৮ আত্মীয়রা নগদ কিছু পেলেও গত ২৯/২/২০২৪ নিকলীর শান্তার পরিবারের জোটেনি কিছুই। মৃত শান্তার সিজারে জন্ম নেয়া ছেলে হারালো মা আর পরিবারের নগদ টাকাসহ হারালো শান্তাকে তবুও সেই ক্লিনিক রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের সামনে, পেছনে বা পাশেই গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশেই বিধিবহির্ভূতভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি।
জানা গেছে, জেলায় ১৭৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে; যার মধ্যে লাইসেন্স নেই ১০টির। বন্ধ আছে দুটি। জেলায় ৫১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে; যার মধ্যে তিনটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, এটি শুধু সেই পরিসংখ্যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তালিকায় থাকা বেশির ভাগ বৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নেই। নেই প্যাথলজিক্যাল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামোও নির্মাণ করা হয়নি। তার পরও এসব প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধন পেয়েছে, নবায়নও হচ্ছে।
সম্প্রতি জেলা শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও যমুনা ডায়াগনস্টিক এবং কনসালটেশন সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট দিয়ে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার দায়ে দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনার সময় মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট পাওয়া যায়।
এদিকে গত বছর অস্ত্রোপচারের সময় ভুল চিকিৎসায় রুপালী আক্তার (২২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া আল-হেরা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটালটি আবারও চালু হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন, সজিব হোসাইন, জহিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রোগী জানান, দোকানের মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের আশপাশেই।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দ ইয়াছিন বলেন, সময় এসেছে প্রতি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৃশ্যমান স্থানে সরকারি নীতিমালা বড় করে টানিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা।
কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান খুকু বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের সংগঠনের সভায় প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এবং ক্লিনিক মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু অধিকাংশ ক্লিনিক গুলোর মধ্যে সরকারি নীতি মালার শর্তগুলোও মানা হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জের হাবিব ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ-র পরিচালক পাপিয়া আক্তার বলেন, আমরা রোগীদের চিকিৎসার শতভাগ নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছি। সকলেই সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসায়ী চিন্তা বাদ দিয়ে সেবার চিন্তা করলে মানুষ সুচিকিৎসা পাবে।
কিশোরগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা খাতে সেবাগ্রহীতাদের প্রতিকার দেওয়ার এখতিয়ার খুবই সীমিত।’
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে নিয়েই আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি; যাতে মানুষকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায়। আমাদের সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা এর আগেও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করেছি। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া।’
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.