অধ্যক্ষ ডঃগোলসান আরা বেগম
তুমি আড্ডা দিতে পারবে না।মন খুলে কথা বলতে পারবে না। মন খুলে হাসতেও পারবে না।নরম পায়ে হাটতে হবে।নীচু স্বরে কথা বলতে হবে।ফোনে কথা বলবে, সেখানেও বাঁধা বিপত্তি। স্বামী ফোনটা কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখবে, কার সাথে তার স্ত্রী কথা বলছে। এটা কি মৌলিক অধিকার হরণ করা নয়?
নারীর অসুখ হয়েছে, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।কাকে বলবে ? হাউজ ওয়াইপ হলে তো সে, স্বামী বা শাশুরির কাছে মুখ খুলে বলার সাহস পাবে না। এই অসুস্থ শরীর নিয়েই সে পরিবারের সমস্ত কাজ করবে। যখন বিছানায় পরে যাবে, তখন নজর ফিরালেও , কিছু করার থাকে না।
স্বামী আশা করে তার স্ত্রী সেজে গুজে গায়ে ফারফিউম মেখে স্বামীর আগমন পথ চেয়ে বসে থাকবে।স্বামীর পায়ের জুতা,গায়ের ওভার কোট খুলে দিয়ে, এক কাপ চা এগিয়ে দিবে। সন্তানরা চায় মায়ের হাতের স্নেহ আদরসহ মজার মজার খাবার। এইতো আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা। অথচ সেই মায়ের কি কোন কিছু ইচ্ছা করে না, একটু স্নেহ আদর পেতে তারও তো মন চায়। সে যদি হয় কর্মজীবি, সে পালন করে ঘরের, অফিসের,রান্না ঘরের, সন্তানের দায়িত্ব এক হাতেই।আমরা বিষয়টি নিয়ে কি ভাবি? সেও মানুষ,তারও আছে সাধ আহল্লাদের চাহিদা।কেউ পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিক, তা কি আশা করতে পারে না। নারীরা সচারচর সে ধরনের সেবা পায় না।
কিছু নারী আজকাল জ্ঞানে, সাহসে, বুদ্ধি, মেধায় এগিয়েছে বহু দুর। নারী পুরূষে সমধিকারের বিষয়টি নিয়ে হাত তুলে করে হৈ চৈ। তখনই বাঁধে ঝগড়া ফ্যাসাদ। এমনকি স্বামী স্ত্রীর মাঝে খুনাখুনিও হয়ে যায়। গলা টিপে, মুখে বালিশ চেপে শ্বাস রুদ্ধ করে স্ত্রীকে মেরে ফেলে।এ সমস্ত খরব অহরহ দেখছি ও শুনছি।হায়দ নারী বিধি বিধান প্রণীত হলে ও নারীকে রক্ষা করবে কে।
সন্তান খারাপ কিছু করলে দোষ দেয়া হয় মাকে । নাম ছড়িয়ে বিশ্বে ছেলে বা মেয়েটি আকাশ ছোঁয়া ধন্য হলে, সবাই বাবা কে বাহাবা দেয়।মার কথা ভুলেও উচ্চারণ করে না। হায়রে দুঃখী মা।
স্ত্রী রান্না করলো ডাল, তরিতরকারি, আরো বহু পদের খাবার,তাতে ভুল বশত লবন কম হতে পারে। কোন কোন স্বামী তা ক্ষমা করে না,বরং হাড়িপাতিল বলের মত ছুঁড়ে মারে।স্ত্রীতো কাঁপতে কাঁপতে জায়গা নেয় দরজার আড়ালে। এই নয় কি আমাদের সামাজিক প্রচলিত চরিত্র। তা কি কাম্য হওয়া উচিত। নারী তুই আবহেলিত হইতে হইতে মরে যা।
হায়রে নারী তুমি সন্তান পেটে নাও, প্রায নয় মাস শিশু পিন্ডটি জরায়ুতে বহন করে বেড়াও। সেই গভর্বতী মা র্ই বুঝে কি দুঃসহনী শারিরীক কষ্ট তার সন্তান জন্ম দিতে। মৃত্যু ঝুকি মাথার নিয়ে অসহ্য ব্যথা যন্ত্র মহ্য করে শিশু সন্তানটি জন্ম দেয়।এর পরে মা আরো বহু যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়। অথচ সেই সন্তানের মালিকানা মায়ের নেই।বাবাই তার স্বত্বাধীকারী।আবার সন্তান জন্ম দিতে না পারবে, নারীকে ডিভোর্স দিয়ে বের করে। অথন ডাক্তারী বিদ্যা বলে সন্তান জন্ম না দেয়ার জন্ম নারীর কোন দোষ নেই। স্বামীর শুক্ত্র কিট জন্ম না হওয়ায় স্ত্রীর জঠরের ছোট ঘরে সন্তান জন্ম হয় না। সুপ্রিয় পাঠক বলেন নারীর সুখ দুঃখের ব্যাথা কত লম্বা এ ভারী।
ঘরের লাইলিকে রেখে যারা ঘুরে বেড়ায় ফুলে ফুলে এখানে ওখানে, আহরণ করেন মধু।সেই মজনুকে কি বলবো। লাইলি কি ভাতের থালা নিয়ে হাসি মুখে অপেক্ষা করবেন?
নারী শীশু বয়সে বাবার উপর নির্ভরশীল, যৌবনে স্বামীর উপর, বুড়ু বয়সে সন্তানের উপর নিভর্রশীল থাকে!নারীর কোন নিজস্ব ঠিকানা নাই। বৃদ্ধাশ্রম হয় কখনও স্থায়ী ঠিকানা,অথবা ফুটপাত বা কারো বাড়ীর আঙ্গিনায়।
কোন কোন নারী একের পর বহু মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়। কোন কোন স্বামী এই ধরনের নারীর চুলের মুটি ধরে সন্তানসহ বের করে দেয়। সে বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাবে, এক বারও স্বামী তা ভাবে না। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকলে বাবার বাড়ীতেও ঠাঁই পায় না।সন্তানদের আছঁলে বেঁধে এ বাড়ী ওর বাড়ীতে কাজ করে জীবন চালায়।কিন্তু নারী তো কোন অবস্থাতেই অধিক মেয়ে সন্তান উৎপাদনের জন্য দায়ী নয়। তা হলে কেন তার এই স্বাস্তি।
তৃণমুল পর্যায়ের পরিবারের মেয়েদেরকে পড়াতে চায় না। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাবা চিন্তা করে, মেয়ে তো শ্বশুরের বাড়ী চলে যাবে, তাদের পড়িয়ে বা তাদের পেছনে টাকা খরচ করে কি হবে। ফলে শিক্ষায় ঝরে পড়ে পরার হার বেড়ে যায়। মেয়েদের শিক্ষার কমে যায় ও অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কারের হার বেড়ে যায় ও জাতীয় উন্নয়নকে বাঁধা গ্রস্থ করে।
কর্মজীবি নারী রাড়ী ফিরতে দেরী হলে রক্ষে নেই, জবাবদিহি করতে হয় বহু ভাবে। তার কলিগ বা বন্ধুর সাথে একটু কথা বললেও স্বামী বা সন্তানের চোখ রাঙানী খেতে হয়। স্বামী যদি গভীর রাতে ঘরে ফিরে স্দত্রী কিছুই বলতে পারে না। বরং স্বামী না ফেরা পর্ষন্ত কেউ ভাতের তালা নিয়ে অপেক্ষা করে,কেউবা নফল নামাজ পড়ে আর আল্লার কাছে আরাধনা করে, আল্লাহ আমার স্কামীকে ভালো করে দাও।
স্বামী কথায় পান থেকে চূন খসলে বলতে থাকে চলে যা বাপের বাড়ী। মাতাল অবস্থায় ঘরে ফিরলেও স্বামী বলে,টু শব্দ করবি না।আমার যা ইচ্ছা করবো। প্রায় সময়ই চূলের মুটি ধরে বলে — বাপের বাড়ী থেকে টাকা এনে দে,আমার ব্যবসায় লস হয়েছে। থকনও নারী থাকে অসহায়।প্রয়োজনে নিজের গায়ের গয়না বিক্রি করে স্বামীর আবদার মিটায়।
হায়রে নারী তুই সামাজিকতার খাঁচায় বন্দি। সমাজ তোকে সর্বদা সূযর্হীন অন্ধকারে রাখে নিমজ্জিত। কোন কোন নারী সেই কারাগারের দ্বার ভেঙ্গে নিজে পায় মুক্তি, অন্য দূর্বল, অসহায় নারীদেরকে মুক্ত আকাশে উড়ার পথ দেখায়।এতো কথা বলার পরও আমি নিজেও মানুষ নামক কারাগারের বন্দি পাখী। মানুষ নয়, পৃথীর সব নারীকেই বলে মেয়ে মানুষ। সেই যতই হউক জ্ঞানে গুণে হিমালয় সমান উচু।
লেখকঃ উপদেষ্ঠামন্ডলীর সদস্য,বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ০১৭১৭৭৬২৭৪৫