সাজন আহম্মেদ পাপন
কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক। অত্যন্ত ব্যস্ত একটি সড়ক। দিনরাত এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে মানুষ। কিশোরগঞ্জ থেকে জেলার ৭টি উপজেলায় যেতে এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্যবহৃত হয় বেশি। তবে এই আঞ্চলিক মহাসড়কে অজানা এক আতঙ্কে চলাচল করে কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলার মানুষ। কোন সময় যে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে যায় কেউ বলতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার জেলখানা মোড় থেকে কটিয়াদী উপজেলার মধ্যপাড়া পর্যন্ত মোট ১৪ কিলোমিটার এলাকায় অহরহ ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। আঞ্চলিক মহাসড়কটির এই ১৪ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত ২০টি ছিনতাই স্পটের কথা জানা গেছে। যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয় সে জায়গাগুলো হলো, জেলখানা মোড় থেকে বিন্নাটি মোড় পর্যন্ত, বিন্নাটি মোড় থেকে চৌদ্দশত বাজার পর্যন্ত, চৌদ্দশত বাজার থেকে নান্দলা বাজার পর্যন্ত, নান্দলা বাজার থেকে পুলেরঘাট বাজার পর্যন্ত, পুলেরঘাট বাজার থেকে কটিয়াদী উপজেলার মধ্যপাড়া বাজার পর্যন্ত।
এই ১৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। মোটর সাইকেল আরোহীর বেশে বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। প্রকাশ্য দিবালোকেই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়া আরেকটি চক্র টার্গেট করে দামী ফোন। দামী ফোনগুলো হয়তোবা ছিনতাই করে অথবা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। যে কারণে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে এই আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলের সময় যাত্রীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিথী আক্তারের বাবার বাড়ি কটিয়াদী উপজেলার আচমিতার গাংকুলপাড়ায়। গত ২১শে ডিসেম্বর বিকালে শিশুসহ সিএনজিচালিত অটোরিক্সাযোগে নেত্রকোনা থেকে বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে চৌদ্দশত এলাকায় মোটর সাইকেল আরোহীবেশী ছিনতাকারীদের কবলে পড়েন তিনি। নগদ টাকা, এনড্রয়েড মুঠোফোনসহ ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি সিএনজি থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। ভ্যানিটি ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে এখন তিনি সুস্থ হয়েছেন।
কুলিয়ারচর ছয়সূতী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমের স্ত্রী আকলিমা আক্তার মসূযা ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা যোগে ফেরার পথে জেলখনার মোড়ের পাশে ভাগাড় সংলগ্ন এলাকায় দুইজন মোটর সাইকেল আরোহী ছিনতাইকারী চলন্ত সিএনজি থেকে তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে ছিলো স্বর্ণের চেইন, কানের দোল, ব্রেসলেট আংটি, বিএড পরীক্ষার প্রবেশ পত্র ও নগদ ১০ হাজার টাকা। ঘটনাটি ২০২২ সালের শেষের দিকের। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন তিনি।
গত ৫ জানুয়ারি সুইডেন প্রবাসী সাইফুল ইসলাম মিল্টন কিশোরগঞ্জ থেকে যাচ্ছিলেন কটিয়াদী। পুলেরঘাট বাজারে পৌঁছানোর পর তিনি সিএনজি থেকে নামেন কাজে। কাজ শেষে সিএনজিতে ফিরে দেখেন তাঁর আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স মোবাইল ফোনটি নেই। তিনি বলতেও পারেন না কখন কোনসময় তার ফোনটি খুইয়েছেন।
কটিয়াদী মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আকলিমা বেগম। গত ৩রা জুন স্বামী হুমায়ুনের সাথে মোটরসাইকেলে করে কিশোরগঞ্জ বাসায় ফেরার পথে নান্দলা এলাকায় পৌঁছালে পিছন থেকে ছিনতাইকারী দ্রুতগতি সম্পন্ন মোটর সাইকেলে এসে আকলিমা বেগমের কাঁধে থাকা ব্যাগটি ধরে সজোরে টান দিয়ে ছিনিয়ে নেয়। এতে মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন। ব্যাগে ছিল এনড্রয়েড ফোন, টাকা ও প্রযোজনীয় কাগজপত্র। এছাড়া গত এক বছরে প্রভাতী সরকার, রুখসানা আক্তার, নূরজাহান বেগম, শেফালী আক্তার, রাহুলসহ শতাধিক মানুষ একইরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, ছিনতাইকারীদের হেঁচকা টানে বিগতদিনে বেশকজন হয়েছেন গুরুতর আহত। পুলিশের কাছে গিয়ে প্রতিকার পাওয়া যায় না। উল্টো হয়রানি বাড়ে তাই ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে জিডি বা মামলা করতে যান না। হাইওয়ে পুলিশের টহল গাড়িও চোখে পড়ে না দাবি ভুক্তভোগীদের। ফলে এই আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন।
র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির বলেন, বেশকিছু দিন জেলায় ছিনতাইয়ের মত ঘটনা কিছুটা কম থাকলেও ইদানিং বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে চলেছে। যার ফলে ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
হাইওয়ের গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আপনি কোন পত্রিকার এতোদূর থেকে বক্তব্য দেয়া সম্ভব না। আপনি হাইওয়ের কটিয়াদী থানার ওসির বক্তব্য নেন।
কটিয়াদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, এরকম ঘটনা ঘটে না। আমরা প্রতিদিন রাতেই টহলে বের হই। আমরা তৎপর আছি। এমন ঘটনা ঘটেওনি, ঘটবেও না।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.