মো: সোহেল মিয়া, স্টাফ রিপোর্টার, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ):
একসময় ছিল যখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল-দাড়ি কাটতেন অসংখ্য নরসুন্দর। এখন সে দৃশ্যের দেখা তেমন একটা মিলেনা। প্রতিটি বাজারে উন্নত মানের সেলুন ও বিউটি পার্লার স্থাপিত হওয়ার কারণে পিঁড়িতে বসিয়ে চুল দাড়ি কাটার দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের হাট বা গঞ্জে বসে চুল কাটা ও সেভ করা নরসুন্দরদের তেমন দেখা যায় না৷ পৌর ভবনের পাশে বৃহস্পতিবার ও রবিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন তিন চারজন নরসুন্দরকে দেখা যায়।
সরেজমিনে হোসেনপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় চুল-দাড়ি কাটছেন সুনিল। যার বয়স ৯০। তার চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই এ পেশার সাথে জড়িত। উপজেলা সদরের হনুমান তলায় ছোট ভাই রাখালের সেলুন থাকলেও তারা বড় দুই ভাই সুনিল আর বুদ্ধু পিড়িতে বসে চুল দাড়ি কাটেন বাজারে।
তারা জানান,এ পেশায় এখন সংসারের খরচ জোগান দেওয়া বড়ই কঠিন। বর্তমানে সেভ ১৫ টাকা ও চুল কাটা ৩০ টাকা।তাও আবার সারাদিন বসে থেকে ৪ থেকে ৫ টা কাস্টমার জুটে। আধুনিক ছোঁয়া না লাগলেও বাপ-দাদা আমলের সেই স্মৃতি ধরে রেখেছেন উপজেলার হাতেগোনা কয়েক জন নরসুন্দর।
ধুলিহর গ্রামের নরসুন্দর মতি মিয়া জানান,
৪০ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন হাট বাজারে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে নরসুন্দরের কাজ করে থাকেন। শুরুতে এক টাকার বিনিময়ে চুল আর পঁচিশ পয়সায় দাড়ি গোঁফ সাইজ করতেন। তখন ভালো আয় রোজগার হতো। আর এখন বাজার মূল্য বাড়লেও সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত মনে বাড়ী ফিরেন সন্তোষজনক রোজগার হয়না।
তিনি আরও জানান-সিদলা ইউনিয়নের পাগলা বাজারে তার ছেলেদের একটি উন্নতমানের সেলুন রয়েছে কিন্তু তিনি বহু বছরের ঐতিহ্য টা ছাড়তে পারছেন না। তার মতে গ্রামে গঞ্জে কাজ করলে সকল বয়সের প্রিয় মানুষদের দেখা মিলে যা এই বৃদ্ধ বয়সে মনের প্রশান্তি আনে। উল্লেখ্য সুপারি গাছের খোলস দ্বারা তৈরি চমকপ্রদ সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ তাদের যন্ত্রাংশ রাখার পাত্রটি একটি বাজারের ব্যাগে করে ঘুরে বেড়ান গ্রামে গ্রামে। বসেন উপজেলার সদর, পিতলগঞ্জ, ভোটের বাজার, গড়বিশুদিয়া, হারেঞ্জাসহ বেশ কয়েকটি বাজারে।
হোসেনপুর বাজারে সেলুনে চুল কাটা নরসুন্দর মিলন জানান, এক সময় হাট-বাজারে পিড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাঁটত মানুষ। কিন্তু কালের বিবর্তনের আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের চুল-দাড়ি কাটার জন্য অনেক সেলুন গড়ে উঠেছে। এসব সেলুনে মানুষ আরাম আয়েশে চুল কাটেন।
সেলুনে চুল কাটতে আসা শামীম মিয়ার কাছে পিড়িতে বসে চুল কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাটে-বাজারে পিড়িতে বসা এই সেলুনগুলো। বর্তমান সময়ে বড় বড় মার্কেটে ঘর সাজিয়ে এমন কি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে নর সুন্দরেরা মানুষের চুল কাটার কাজ করছেন। মানুষের সুন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল এই চুল নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সেই কারণে নাপিতদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা আজও ফুরিয়ে যায়নি।তবে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের চড়া বাজারে অসহায় দিনাতিপাত করেন পিঁড়িতে বসিয়ে চুল দাড়ি কাটা নরসুন্দরেরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.