কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানা এলাকায় পুলিশি অভিযানে রক্ষা পেল তরুনির প্রাণ। অপহরন পর মুক্তিপন দাবী ও দলবদ্ধভাবে ধর্ষনের ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক ৩ আসামীকে গ্রেফতার ও অপরাধকর্মে ব্যবহৃত এক মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
পাকুন্দিয়া থানার মামলা নং- ১৭, তাং- ২৮/০১/২০২৪ ইং, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সং/২০) এর ৭/৮/৯(৩)/৩০।
অটো আটকে টাকা দাবী করছে এমন সংবাদ এসেছিল থানায়। সংবাদটির গুরুত্ব দিয়ে সাথে সাথেই পাকুন্দিয়া থানার এসআই (নিঃ) দীন মোহাম্মদ, এসআই নাজিম উদ্দিন এবং এএসআই মোঃ রাকিব উজ্জামান খান, ছুটে চলে যায় তারাকান্দি এলাকায়। সেখানে গিয়ে অটো আটক অবস্থায়ও পায়। পরে জানতে পারে অটোতে আসা এক তরুনীকে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত টিনের ঘরে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। একের পর এক যুবক কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষিত হয়ে যাচ্ছিল তরুনিটি। মাটি থেকে উঠে দ্বাড়াতে না পারলেও বারংবার পাশবিকতার শিকারে কুকড়ে যাচ্ছিল তার জীর্ণ দেহ। ইতিমধ্যেই ৫ জন কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে তরুনিটি। পুলিশের অবস্থান বুঝেই সটকে পরে প্রায় সকল অপরাধীরা। তবে মোঃ কাউসার আহম্মেদ (২৪),ও জুবায়েদ হাসান শুভ (১৮), দ্বয়কে ঘর থেকে পালানোর সময় দৌড়ে ধরে ফেলে এসআই (নিঃ) দীন মোহাম্মদের টিম। পরে পুলিশের অভিযানে তোফাজ্জল হোসেন রাজু (২৪) নামে ঘটনার এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
গত ইং ২৭/০১/২০২৪ তারিখ বিকাল অনুমান ১৫.০০ ঘটিকার সময় গাজীপুর এসকে ট্রিমস গার্মেন্টস কর্মী ১৮ বছরের তরুনী নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানাধীন চরতেরটেকিয়া আসার পর তার বন্ধু সাব্বির হোসেন (১৮), পিতা- আমির হোসেন, সাং- বরাটিয়া, থানা- পাকুন্দিয়া, জেলা- কিশোরগঞ্জ এবং ভিকটিমের বন্ধু সাব্বির হোসেনের মামা সম্পর্কে অটো ড্রাইভার হুমায়ুন কবির (২১), পিতা- শহিদ মিয়া, সাং- মরুরা, থানা- পাকুন্দিয়া, জেলা- কিশোরগঞ্জ এবং সাব্বিরের বন্ধু আশরাফসহ পাকুন্দিয়া থানাধীন তারাকান্দি গ্রামস্থ তারাকান্দি বাজারে ঘুরতে যাওয়া অবস্থায় ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় আসামী- ১। মোঃ কাউসার আহম্মেদ (২৪), পিতা- মোঃ আলী আকবর, ২। জুবায়েদ হাসান শুভ (১৮), পিতা- মোঃ খসরু মিয়া, উভয় সাং- বীর পাকুন্দিয়া, ৩। মেহেদী হাসান (২২), পিতা- মোঃ মাছুম ভূইয়া, সাং- তারাকান্দি (ভূইয়াবাড়ি), ৪। হৃদয় (৩২), পিতা- এরশাদ মিয়া, সাং- তারাকান্দি (মানুল্লারচর), ৫। বাবু (২২), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- তারাকান্দি, ৬। তোফাজ্জল হোসেন রাজু (২৪), পিতা- মুক্তার উদ্দিন, সাং- চর পাকুন্দিয়া, ৭। ইয়াসিন (২৫), পিতা- হিরু মিয়া, সাং- চর পাকুন্দিয়া, সর্ব থানা- পাকুন্দিয়া, জেলা- কিশোরগঞ্জগন উক্ত অটোরিক্সাটিকে তারাকান্দি ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে নিয়া যায় এবং মুক্তিপন বাবদ ভিকটিমের বন্ধু সাব্বিরের কাছে ১০,০০০/- টাকা দাবি করে।আসামীরা তাহাদেরকে আরো বলে যে, মুক্তিপনের টাকা না দিলে ভিকটিমকে এবং তাহাদের সাথে থাকা অটোরিক্সা ছাড়বে না।আসামীরা অটোরিক্সার ড্রাইভার ও ভিকটিমের বন্ধু আশরাফ সহ মাদ্রাসার মাঠে রেখে ভয় দেখিয়ে ভিকটিমকে মাদ্রাসার পাশে জনৈক রানা ভূঞার একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে নিয়ে গিয়ে আসামীদের মধ্যে প্রথমে হৃদয়, পরে মেহেদী, বাবু, কাউসার এবং সবশেষে আসামী জোবায়ের হোসেন শুভসহ ৫ (পাঁচ) জন আসামী অপরাপর আসামীদের সহযোগিতায় উক্ত ঘরের পাশের পূর্ব কোনায় মাটিতে ফেলে ভিকটিমকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পর্যায়ক্রমে ধর্ষন করতে থাকে। ঘটনার সময় মাদ্রাসার মাঠে থাকা সাব্বিরের বন্ধু আশরাফ মুক্তিপনের টাকা সংগ্রহের কথা বলে কৌশলে থানায় এসে থানা পুলিশকে অবগত করলে পাকুন্দিয়া থানার এসআই মোঃ দ্বীন ইসলাম, এসআই নাজিম উদ্দিন, এএসআই মোঃ রাকিব উজ্জামান খান, তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষনের ফলে অসুস্থ অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে ৩ (তিন) জন আসামীকে গ্রেফতারসহ অপরাধ কাজে ব্যবহৃত একটি সুজুকি মোটর সাইকেল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেন।
ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাকুন্দিয়া থানার মামলা নং ১৭, তাং- ২৮/০১/২০২৪ ইং, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সং/২০) এর ৭/৮/৯(৩)/৩০ মামলা রুজু হয়। মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ মোবারক হোসেন, পাকুন্দিয়া থানা, কিশোরগঞ্জ। ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য ওসিসি, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জে প্রেরণ করা হয়েছে। ধর্ষনের ঘটনা প্রমাণে সহায়ক আলামত জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) সহ ঊর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিকটিম ও ধৃত অপরাধীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জড়িত পলাতক সকল আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।