মোঃ শামসুল হক, স্টাফ রিপোটারঃ আবুল কালাম এবার ইরি চাষ করছেন প্রায় ২ একর জমিতে। সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাগুলোও বড় হয়েছে। কিন্তু চারা রোপণ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কারণ, শ্রমিক-সংকট। ফলে নিজেই শীতে ধানের চারা রোপণে নেমে পড়েছেন।
আবুল কালামের বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার নামা জিনারী গ্রামে। তিনি বলেন, ইরি রোপণের মৌসুম সময় কমে যাচ্ছে। এ বছর মজুরি গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। মজুরও পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বছর এই একটা ফসলের ওপর ভরসা করতে হয়। বসে থাকলে তো চলবে না, তাই নিজেরাই শুরু করেছি।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো জায়গায় ধান চারা রোপণ প্রায় শেষ হতে চলছে। তবে চাহিদামতো শ্রমিক না পাওয়ায় কাজ চলছে ধীর গতিতে। আবার অনেক এলাকায় এখনো ধান রোপণ শুরু হয়নি।
হোসেনপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ইরি চাষের লক্ষ্য প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমি। শ্রমিক-সংকটে রোপণ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম শাজাহান কবির শ্রমিক-সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কৃষিতে শ্রমিক-সংকট বাড়তে থাকবে। আমরা কৃষকদের রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান লাগাতে উৎসাহিত করছি। এতে অত্যন্ত কম খরচ ও কম জনবল ব্যবহার করে ধানের চারা লাগানো যাবে। ঘণ্টায় ১ একর জমিতে চারা লাগানো যাবে। খরচ পড়বে ৮০০ টাকা। কৃষক যন্ত্রটি ৭০ শতাংশ ছাড়ে নিতে পারবেন। ৩১ হাজার টাকা জমা দিলেই কৃষককে এটা দিতে হবে।’
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা
গেছে, পৌষের মাঝামাঝি থেকে মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ইরি চারা রোপণ করা হয়। প্রতিবছর জানুয়ারীর মধ্যে প্রায় সব জমিতেই ধান লাগানো হয়ে যায়। শ্রমিক সংকটে এবার লাগাতে দেরি হচ্ছে । এখন সবাই ধানচারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ জন্য শ্রমিকের চাহিদা ও মজুরি বেড়েছে।
তাঁরা আরও বলেন, চারা রোপণের মৌসুমে পার্শ্ববর্তী গফরগাঁও, নান্দাইল বিভিন্ন উপজেলা আগাম ইরি শুরুতে মজুরেরা সেখানে ঝুকে পড়েছেন ।
শ্রমিক সংগ্রহের হাট হোসেনপুর কুড়িঘাট বাজার, গিয়ে দেখা যায়, ছয় দিন কাজ করার জন্য একজন কৃষিশ্রমিকের পারিশ্রমিক ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। আর চাহিদার তুলনায় শ্রমিকও কম তাই দাম বেশি দিয়েও শ্রমিক পাচ্ছেন না কৃষকরা । স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি আরও বেশি। কয়েকজন কৃষক বলেন, গত বছর শ্রমিক পাওয়া গেছে ২৫শত থেকে ৩৫০০ শত টাকায়। এবার তা অনেক বেড়ে গেছে।
চরহাজিপুর গ্রামের কৃষক মশিউর রহমান সুমন বলেন, শ্রমিকের কারণে চারা লাগাতে দেরি হচ্ছে আমাদের। এখন মজুরি বেশি। আবার সময়ও চলে যাচ্ছে। তাই মানুষ ঋণ করে হলেও দ্রুত ধান চারা লাগানো শেষ করতে চাচ্ছেন। তবে কতজনের পক্ষে এত টাকা দিয়ে চারা লাগানো সম্ভব হবে?’
চর জিনারী গ্রামের আরেক কৃষক বুলবুল বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন হাটে যাচ্ছি। শ্রমিক নিতে পারছি না। যেসব জমিমালিকের টাকা আছে, তাঁরা বেশি দাম দিয়ে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মতো ছোট চাষিরা দাম কমার অপেক্ষায় আছেন।
কুড়ের পাড় জামতলা গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুর রসূল মিয়া বলেন, চাষ, শ্রমিক, সার সব খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ৭০থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সঠিক সময়ে লাগাতে না পারলে ফলন কমে যায়। তখন তো টাকা ওঠানোই দায় হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ১নং ব্লক উপসহকারী দিলশাদ আরা মুন্নী জানান, শ্রমিক সংকট আছে তার পরেও ছোট কৃষকরা নিজেরাই চারা রোপন করছেন, যাদের জমি বেশি পরিমান তারা একটু হিমশিমে পড়ছেন
সময়ের সাথে শ্রমিক সংকট কমে যাবে। মৌসুম থাকতেই চারা রোপণ করা সম্ভব হবে। দায়িত্বে থাকা প্রতিটি ওয়ার্ডেই ঘুড়ে ফিরে দেখছেন তিনি এবং কৃষকদের ভিবিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানান এ উপসকারী।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.