ওয়াসিম কামাল
লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক, বিপদগ্রস্ত, অসহায় এবং পাচারের শিকার বাংলাদেশি নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে দূতাবাস হতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে এই সকল বাংলাদেশিকে নিরাপদে দেশে প্রেরণ করার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং লিবিয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে দূতাবাস একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার সম্প্রতি লিবিয়ার মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী এবং আইওএম লিবিয়ার ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধানের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ২৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে ত্রিপলীর ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে ১৪৩ জনকে আইওএম এর সহযোগিতায় দেশে প্রেরণ করা হয়েছে। আইওএম কর্তৃক ভাড়াকৃত লিবিয়ার বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইট (UZ222) আগামীকাল ২৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সকাল ০৫:৫০ ঘটিকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকায় অবতরণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও আগামী ২৯ নভেম্বর এবং ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে দুইটি ফ্লাইটে যথাক্রমে ত্রিপলী এবং বেনগাজীর ডিটেনশন সেন্টারে আটক আরো ৩২০ জন আটক বাংলাদেশিকে দেশে প্রেরণ করা হবে।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তরের অভ্যর্থনা হলে প্রত্যাবর্তনে অপেক্ষমান বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদেরকে বিদায় জানান। এসময় তিনি অবৈধ অভিবাসনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঝুঁকি ও বিপদ সম্পর্কে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী বাংলাদেশিদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসনের শিকার ব্যক্তিরা বিপুল আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক ট্রমার সম্মুখীন হন। এছাড়াও অবৈধ অভিবাসন অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীদের জীবনকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে। এপ্রেক্ষিতে মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রত্যাবর্তনকারীদের দেশে ফেরত যাওয়ার পর তাদেরকে লিবিয়ায় পাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
সাক্ষাৎকালে মান্যবর রাষ্ট্রদূত দেশে প্রত্যাবর্তনকারী বাংলাদেশিদেরকে ভবিষ্যতে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বৈধ অভিবাসনে উৎসাহিত করেন। এসময় তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও লিবিয়ার মধ্যে জনশক্তি রপ্তানিতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে; যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে লিবিয়ায় বৈধভাবে আগত কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রত্যাবর্তনকারীদের বাংলাদেশে তাদের নিজ গ্রাম, ইউনিয়ন এনং থানাসহ সর্বোপরি বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করার আহ্বান জানান।
পরিশেষে মান্যবর রাষ্ট্রদূত লিবিয়ার অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়ের পর ত্রিপলী ও বেনগাজীর বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশীদের সাথে সাক্ষাৎ করা হয় এবং তাদের অনুকূলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে আইওএম এর নিকট রেজিষ্ট্রেশন পূর্বক স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।