সরকার অরুণ যদু,রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি \ রাজারহাটে অটো চালক থেকে শিক্ষক হলেন মাইদুল ইসলাম। এনটিআরসিএ কতর্ৃক শিক্ষক মনোনীত হয়ে রাজারহাট ফাজিল মাদরাসার মৌলভী শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করেন। মাইদুল ৯বছর ধরে অটো রিকসা চালিয়ে জীবিকা নিবার্হ করে আসছিলেন ।
জানা গেছে,উপজেলার চাকির পশার পাঠকপাড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার পুত্র মাইদুল ইসলাম ২০০৯সনে কামিল পাশ করার পর মৌলভী শিক্ষক হিসেবে ২০০৯ইং সনে ৫ম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০০৯ থেকে ২০১১সন পর্যন্ত তিনি ৬হাজার টাকা বেতনে ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় চাকুরী করেন। এরপর বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার আবেদন করেও চাকুরী মিলেনি। বাধ্য হয়ে তার দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের ভরন পোষনের জন্য তিনি ২০১৫ইং সনে অটো রিকসা চালানো শুরু করেন। ২০২২ইং সনে চতুর্থ গণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এনটিআরসিএ’র আওতায় শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করেন। পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে মাইদুল ইসলাম রাজারহাট ফাজিল মাদরাসার মৌলভী শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন। পরে এনটিআরসিএর নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার তিনি রাজারহাট ফাজিল মাদরাসায় যোগদান করেন।
মাইদুল ইসলাম বলেন, ঘরে চেয়ার-টেবিল ছিল না। মেঝেতে মাটির উপর বস্তা বিচিয়ে এবং চৌকিতে বসে ঝুঁকে পড়তে পড়তে পিঠে ব্যাথা হয়ে যেত। শুরুতে কৃষক পিতার টাকা এবং মায়ের হাস-মুরগির ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে আমার লেখা পড়ার খরচ চলেছিল। পরে দাখিল পাস করার পর অভাব-অনটনের সংসারে বাবা-মায়ের পক্ষে খরচ বহন করা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে পড়ে। তবে শত কষ্টের মাঝেও আমি কখনো লেখাপড়া ছেড়ে দেইনি। বরং লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ কর্ম করে অর্থ উপার্জন করে সংসারে সহযোগীতা সহ নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করেছি।
ছেলের সফলতায় অনেক খুশি মাইদুলের পিতা বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন,ছেলেটা এত শিক্ষিত হওয়ার পরও চাকুরীর অভাবে অটো রিক্রা চালিয়ে পরিবারের ভরন পোষন দিয়ে আসছে। শত কষ্টের মধ্যে সে লেখাপড়া বন্ধ করেনি। দেরিতে হলেও এনটিআরসিএ তার মেধার মূল্যায়ন করেছে এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া করছি।
মাইদুলের মা মমতাজ বেগম বলেন,এই যুগে মাইদুলের টাকা ছাড়া চাকুরি হবে ভাবতেই পারিনি। পরে রেজাল্ট শুনে চোখে পানি আসছে।
স্থানীয় চাকিরপশার তালুক দাখিল মাদরাসার সুপার মানিক মিয়া বলেন,ছোট বেলা থেকেই খুব পরিশ্রমি যুবক ছিল মাইদুল। দেরিতে হলেও সে তার পরিশ্রমের ফল পেয়েছে।
রাজারহাট ফাজিল মাদরাসার সহকারি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন,মাইদুল আমার মাদরাসারই ছাত্র ছিল। ছাত্র বয়েসে সে লেখাপড়া ও আচার আচরনে ভালো ছিল । সে পারিবারিক অভাব অনটনের মধ্যেও লেখাপড়া ছেড়ে দেয়নি। এখন থেকে হার না মানা মানুষদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হলো।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.