মোঃ মাসুদ রানা, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লীর মালিক ও শ্রমিকরা। তবে করোনার এই কঠিন প্রভাবের রেশ কাটতে না কাটতেই হঠাৎ বিদ্যুৎ, রং ও সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধির কারণে চিন্তিত তাঁত মালিকরা।
দিনরাত তাঁতের খট খট শব্দ জানান দিচ্ছে, এ শিল্প মন্দা কাটিয়ে কিছুটা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বাজারে কাপড়ের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দাম অনেক বেড়েছে। গত দুই বছর আগের এ সময়ের চেয়ে এখন বেশি দামে কাপড় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এই মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে করোনার প্রভাব, রঙ-সুতাসহ তাঁত উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন তাঁত ব্যবসায়ের সাথে জড়িত মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি,এনায়েতপুর,শাহজাদপুর উল্লাপাড়াসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন তাঁত ফ্যাক্টরি গুলোতে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের আধুনিক রুচিশীল কাপড়সহ ঈদ পোশাক। জামদানি, সুতি জামদানি, সুতি কাতান, চোষা, বেনারসি, শেড শাড়ি, লুঙ্গিসহ নানা ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে এখানে। শাড়ির ওপরে বর্ণিল সুতা, বাক ও চুমকিরও কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়া কাপড়ের ওপর প্রিন্ট রংতুলি দিয়ে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশাও দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন নকশার তৈরি কাপড়ের চাহিদা এখন দেশ ছাড়িয়ে এর সুনামের সাথে ছড়িয়ে পড়েছে ভারত, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও এনায়েতপুরের খুকনীতে তৈরী বেনারসি শাড়ি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁত কারখানার মালিকরা। কাপড়ের উৎপাদন বাড়াতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তাঁত শ্রমিকরা। কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের কোলাহলে সরব হয়ে উঠেছে বেলকুচি,এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, উল্লাপাড়ার তাঁতপল্লী।
এদিকে, এ জেলায় তাঁতের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পুজা-পার্বণে কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। এ কারণে তাঁতপল্লীতে কাজের চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও তাঁত পল্লীগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই ফরিয়া ব্যবসায়ীদের আানোগোনাও বেড়েছে।
সিরাজগঞ্জের তৈরি বেনারসি শাড়ি দেশে বিদেশে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁত কারখানার মালিকরা। কাপড়ের উৎপাদন বাড়াতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তাঁত শ্রমিকরা।
ঘরে বসে নেই নারীরাও। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নলীতে সুতা ভরা, সুতা পারি করা, সুতার কুন ভাঙ্গানো, সুতায় মাড় দেওয়া,সুতা রোদে শুকানোসহ কাপড় বুননের কাজে সহযোগিতা পিছিয়ে নাই নারী শ্রমিকরাও।
তাঁত শ্রমিক আব্দুর রহমান জানান, করোনার কারণে কারখানা বন্ধ ছিল। খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটিয়েছি। আবার কারখানা চালু হয়েছে, দিনরাত পরিশ্রম করছি। কাজ করে সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পায়। বাজারে কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। সামনে ঈদ পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়তি রোজগারের আশায় রাত-দিন কাজ করছি বলে জানান।
সিরাজগঞ্জ হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম এর সভাপতি মো: বদিউজ্জামান বলেন,দেশে বিদ্যুৎ, রং ও সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধির কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছে তাঁত মালিকরা। তাঁত শীল্পকে বাঁচানোর জন্য যদি ইতোমধ্যে সরকার তাঁত ব্যাংক চালু না করে, সল্প সুদে লোন তাঁতীদের না দেয় তাহরে দেখা যাবে যে এই তাঁত শিল্প একদিন বন্ধ হয়ে যাবে।