এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শাহ্ আলম
দেশের প্রতিথযশা বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, যিনি মিডিয়া জগতে দেশ- বিদেশে অত্যান্ত পরিচিত মুখ। তিনি সম্প্রতি হিরো আলমের উত্থানকে জড়িয়ে আমাদের রুচির দুর্ভিক্ষ শিরোনামে একটা স্ট্যাটাস প্রদান করেন।
মামুনুর রশীদ বলেন রুচির দুর্ভিক্ষে পড়েছে দেশ। যে কারণে কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এমনকি এসব কারণেই সেখান থেকে হিরো আলোমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে।
যা সামাজিক মাধ্যমে সুনামিতে রূপ নিয়ে ভাইরাল হয়। মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূলধারার ইলেকন্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায়। শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। ইউটিউব থেকে শুরু করে মুল ধারার টকশোতে বিগত কয়েক দিন যাবত নিয়মিত সংবাদে ও পর্যালোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে এই রুচির দুর্ভিক্ষ। যদিও এই আলোচনা ছাপিয়ে বর্তমানে দেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর সাংবাদিক (সাভার প্রতিনিধি) শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার এবং সম্পাদক মতিউর রহমান এর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। প্রথম আলোর সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বিষয়টি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তজাতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবী উঠেছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশকে অবিলম্বে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের গ্রেফতার,হয়রানি ও ভয় দেখানো এবং অনলাইনে সমালোচনামূলক কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি অবিলম্বে এই আইনের ব্যবহার স্থগিত করার আহ্বান জানাই।
এই অবস্থায় অনেকের মনেই প্রশ্ন এবং জানার আগ্রহ দেখা দিয়েছে রুচির দুর্ভিক্ষের প্রশ্ন কি শুধুই হিরো আলমের কর্মকান্ডে ? আর কোথাও কি রুচির দুর্ভিক্ষ নেই নাকি আমরা সচেতন ভাবে সমাজের আর দশটা কু-রুচিপূর্ণ কাজ কিংবা ঘটনাকে আড়াল করার জন্য হিরো আলমের মত নিরীহ মানুষকে নিয়ে পড়ে আছি যাতে সমাজের দুর্গন্ধযুক্ত কর্মকান্ডগুলো যার মধ্যে চরম রুচির দুর্ভিক্ষ লুকায়িত আছে। ফলে ওইসব বিষয় গুলো থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিতে এ ইস্যুটিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কারণ যখন ভদ্রবেশী তথাকথিত শিক্ষিত প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি জাল- জালিয়াতির ও প্রতারণা করে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে, নিজের ক্ষমতা ও পদ পদবি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে ঘুষ দুর্নীতির করে বিদেশে বেগম পাড়া তৈরী করে, যখন কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে মানুষের অধিকার পদদলিত করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে,পবিত্র রমজান মাসে মানুষের আবেগ অনুভূতি ও বাস্তবতাকে পুজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দেয় এমন অসংখ্য নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত বিষয় আমাদের সমাজে বিদ্যমান যা নিশ্চয় কোন রুচিপুর্ণ কর্ম নয়। অথচ আমরা ব্যস্ত আছি হিরো আলমকে নিয়ে। বাস্তবে হিরো আলম দারিদ্র্যের সাথে লড়ায় করা দু’ মুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম করা এক যুবক। জীবনের শুরুতে ডিশ ব্যবসা দিয়ে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে মিডিয়া জগতের কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজের মত করে গান, নিজের অভিনীত নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরী করে আলোচনায় আসেন। তবে ইদানিং জাতীয় সংসদের একটি উপ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে এবং সম্প্রতি দুবাই এ একটি স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে দিয়ে পত্র পত্রিকায় আলোচনার শিরোনামে আসে। বস্তুত শিল্প সাহিত্য শিল্পী গান কিংবা অভিনয় যাই বলিনা কেন এর মধ্যে রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তা মোকাবেলা করতে হবে শৈল্পিক কর্ম উপস্থাপনের মাধ্যমে, যুক্তিসংগত কথা আচরণের মাধ্যমে। কারণ একটা জাতির চিত্র ফুটে উঠে তাঁর শিক্ষা, সংস্কৃতি মানুষের জীবনযাপন,বাক স্বাধীনতা, চিন্তাশক্তি, পোশাকাদি ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে।