নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালাল সিন্ডিকেটের সিল ছাড়া নড়ে না পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের আবেদনপত্রের ফাইল। সিল থাকলেই আবেদন ফাইল দ্রুত গতিতে চলে এমন রেওয়াজ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
আর এজন্য প্রতি আবেদন ফাইলে নেওয়া হয় এক হাজার টাকারও বেশি। ‘চ্যানেল ফাইল’ নামে এভাবেই প্রতিদিন শত শত পাসপোর্ট আবেদন থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রের সদস্য ও অফিসের লোকজনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্তদের দ্বারা পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন বেশকয়েকটি কম্পিউটার দোকানের মাঝেই সিন্ডিকেট বানিজ্য গড়ে উঠেছে। এসব কম্পিউটার দোকানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দালাল ও কম্পিউটার মালিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। আর এই দালাল সিন্ডিকেটদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোপন আঁতাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুকৌশলে আদায় করা হয় ঘুষ বাণিজ্যের টাকা। এ জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩-৪শ’ পাসপোর্ট আবেদন জমা হয় এই পাসপোর্ট অফিসে। এ আবেদনগুলি কম্পিউটারের দোকান থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সময় দোকান মালিক ও দালালরা আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
অনেক কম্পিউটার মালিকরা যাঁরা দালাল ছাড়া সেবার কাজ করেন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করে বলেন, ‘চ্যানেল ফাইল’ এর নামে এক হাজার টাকারও বেশি টাকা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে হয়। পাসপোর্ট আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আবেদনপত্রের সঙ্গে চালান ফরমের যেকোনো স্থানে কম্পিউটার দোকানের সংকেত চিহ্নযুক্ত সিল ব্যবহার করা হয়। আর এ সিলের কারণে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুঝতে পারেন এ আবেদনপত্রগুলো কার মাধ্যমে আসছে। এ ধরনের আবেদনপত্র গুলো পাসপোর্ট অফিস ও দালালদের মধ্যে ‘চ্যানেল ফাইল’ বলে প্রচলন রয়েছে। একেক কম্পিউটার দোকানে একেক সংকেত চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ধরনের আবেদনপত্র খুব সহজেই পাসপোর্ট অফিসে গ্রহণ করা হয়।
পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন আবেদনকারী বলেন, যেসব আবেদনপত্রের ফাইলে কোনো সিল থাকে না সেসব ফাইল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফেরত দেওয়া হয় ফলে ৩/৪ দিনেও কাজ সম্পন্ন করা যায় না ফলে বাধ্য হয়ে তাদের সিন্ডিকেটে যেতে হয় । পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ নানাভাবে হয়রানি করারও অভিযোগ করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন বিকেল ৪টার পরে ‘চ্যানেল ফাইল’ এর নামে কোন দালালের কয়টি আবেদনপত্রের ফাইল জমা হয়েছে তার হিসাব-নিকাশ করে দালালদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক আশরাফ । পরে ‘চ্যানেল ফাইল’ এর প্রতিদিনের টাকা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ও তার কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।
‘চ্যানেল ফাইল’ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক আশরাফকে কয়েক বাট ফোন দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি । অফিসের আরেক কর্তা ফোনে এসব বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নন তবে তিনি পাসপোর্ট অফিসের বিষয়ে কথা বলতে সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
অন্যদিকে সব নিয়ম মেনে পাসপোর্ট আবেদন করে পাসপোর্ট প্রাপ্তির তারিখ অতিবাহিত হলেও পাসপোর্ট আবেদনকারীরা মাসের পর মাস ঘুরেও তাদের পাসপোর্ট পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তথ্য চাইলে সংবাদ কর্মীদের দালাল ধরিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন সহকারী পরিচালক তিনি বলেন কে দালাল কারো গায়ে লেখা থাকে না তবে উনার অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা প্রতিদিন যাতায়াত কারী ব্যাক্তিদের বিষয়ে নিরবতা পালন করেন সহকারী পরিচালক । পাশাপাশি সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়ার,তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কথিত কয়েকজন সাংবাদিকদের মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক,আইরিন পারভীন ডালিয়া বলেন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী থাকলে নিয়ে আসুন ।
পাসপোর্ট আবেদনপত্রে সিল ও অফিসে দালাল প্রসঙ্গে তিনি কথা পরিবর্তন করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে এড়িয়ে যান। এবং এ ধরনের কোনো অভিযোগ এলে আমার কাছে আসে না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে এলে আমি সেটা দেখবো। আমার অফিসে সেবা দিতে আসা লোকজনের সাথে অনেকে আসে এ চত্বরে কে দালাল বুঝব কেমনে প্রবেশ করতে পারে না। অফিসের ২০ থেকে ২৪টি সিসি ক্যামেরা সেট করা আছে তা-ও যেন শুভংকরের ফাঁকি। দালাল নৈরাজ্যের বাস্তবতার জেরে সম্প্রতি পাসপোর্ট কর্মকর্তার কলার চেপে ধরে এক নেতা বললেন, ভুঁড়ি বের করে ফেলবে এমন ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ সবই অফিসের দালাল চক্রের কারণ হিসেবে দাবি করে স্হানীয় লোকজন।
এ বিষয়ে অফিসের দাবি , কয়েকটি ফাইলে জোর করে তাঁর স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা।
তবে নেতার দাবি তাঁর কাছে পাসপোর্ট ফরমের ফাইলে সইয়ের জন্য ঘুষ চাওয়া হয়েছিল।