মো: সাখাওয়াত হোসেন, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি। দুইধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা স্কুলজীবনে পা দিয়েই পড়েননি এমন মানুষ খুবই কম আছে। যদিও এখন প্লে ক্লাসে গিয়ে পড়তে হয় টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার কিংবা হামটি ডামটি……। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈশাখ মাসে নাগর নদী দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত হ্রাস ও দখলের কারণে ফাল্গুন মাসেও এই নদীর পানি থাকেনা।
জানা গেছে, আজ নদীর কূল আছে, কিনারা আছে, কিন্তু ঢেউ নেই। বহুদিন ধরে নদীর বুকে পাল তুলে নৌকা আসা-যাওয়া করে না। দিন দিন ছোট হয়ে আসছে নদীর আকার। নদীর বুক থেকে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করায় নদীর রুপ আজ বিলীন হওয়ার দারপ্রান্তে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের নাগর নদী পানি না থাকায় নাব্যতা হারাচ্ছে। এক দিকে নাগর নদী গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন এবং আবার নদীর দুই ধার দিয়ে অনেকেই কৃষি আবাদ করেছে। যার ফলে নদী হারাতে বসেছে তাঁর নদীত্বর রুপ। এক সময় পানিতে থৈ থৈ করতো নাগর নদী। পানি না থাকায় শুখিয়ে মরছে নদী। যৌবন হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশের হচ্ছে মৃত্যু। এ নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই। কালের আবর্তনে নদীর ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমপ্রান্তে ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি গ্রামের বুকচিরে অবস্থিত নাগর নদী। এই নদী বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রবহমান করতোয়া (নীলফামারী) নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নাটোরের সিংড়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নওগাঁর আত্রাই নদীর জলধারায় সম্পৃক্ত।
দমদমা গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, এক সময় এই নদী-নালা, খাল-বিল, শাখা-প্রশাখা গুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে বোয়াল, গজার, মাগুর, কৈসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন পানির অভাবে মাছ তো দূরের কথা নদীই ‘মরা গাঙে’ পরিণত হওয়ার পথে। তাই নাগর নদী খনন করে নাব্যতা ফিরে আনার দাবি জানান তিনি। মোস্তফা, ফারুক হোসেন, মিলনসহ কয়েকজন জেলে জানান, আগে এই নদী অনেক মাছ পাওয়া যেত। সেই মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন পানির অভাবে মাছও পাওয়া যায়না।
বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম.ডি আরিফ সরকার বলেন, তিনটি জেলা নিয়ে নাগর নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যে নাগর নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদী তার পূর্বের অবস্থা ফিরে পাবে।