হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি:
গ্ৰাহকদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নয়ন করা হবে এমন লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা’র সাড়ে চার হাজার গ্ৰাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা কথিত এনজিও ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন।
হাওরে সহজ সরল কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ, তাদের সন্তানদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া এমনকি মহিলাদের কর্ম সংস্থান তৈরি করে দেওয়া হবে এমন অনেক মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে ১৫০ টাকা নিয়ে সদস্য করত কথিত এনজিও ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন।
সদস্য করার পর শুরু হয় প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা নেওয়া। এখানেও প্রলোভন দেখানো হয়েছে যারা এক বছর ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করবে তাদের কে বিনা সুদে প্রয়োজন সাপেক্ষ ঋণ দেওয়া হবে।
ইটনা উপজেলায় কতিথ শাখা ম্যানেজার একজন এবং প্রতি ইউনিয়নে একজন করে মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি পেয়ে সহজ সরল গ্ৰামের মহিলাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রলোভন দেখানো শুরু করে ম্যানেজারসহ মাঠকর্মীরা। তাদের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে সদস্য হয়ে সঞ্চয় দেয় মহিলারা।
ইটনা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোআরা (৫৭) বলেন, প্রথমে বলছে এটা মানবিক সমিতির মতো হবে, বাজারে পাশে পাঁচ তলা একটা বিল্ডিং করবে তারপর বাজারে সব মালামাল অর্ধেক দামে বিক্রি করবে, ডাক্তার দিবে, সহযোগিতা দিবে, ছয়মাস মেয়াদি বিনা সুদে ঋণ দিবে। সদস্য হবার পর কিছু সদস্যকে ১০ টা ছোট হাঁসের বাচ্চা দিয়েছিল তখনও ২০ টাকা করে নিছে। এখন উনাদের অফিস বন্ধ, কাউকে পাই না, ম্যানেজার বাহার মিয়ারে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে আমরা বাহারকে দেখেই সদস্য হয়েছি। আমরা এখন টাকা ফেরত চাই, বিচার চাই।
ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশনের আর একজন সদস্য জয়নাব বেগম জানান, অর্ধেক দামে জিনিস দিবে, চাকরি দিবে, ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে দিবে এমন অনেক লোভনীয় ও ভূয়া কথা বলেছে এখন কিছুই পাই না, আমাদের টাকা ফেরত চাই।
আর একজন সদস্য জহুরা বেগম বলেন, আপনারা এটার মধ্যে সদস্য হন আপনাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিবো এখন আর কোনো খবর নাই, আমরা এটার সঠিক বিচার চাই, আর যেন এমন ভাবে কেউ প্রতারিত না হয়।
সদস্য চায়না আক্তার বলেন, অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিছে কিন্তু ২ বছরের মধ্যে আজ পর্যন্ত কিছুই পাইলাম না, তাদের কোনো খোঁজখবর নাই।
এ ব্যাপারে ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন ইটনা শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মোঃ বাহাউদ্দিন বাহার জানায়, আমাকে নিয়োগ দিয়েছিল আমি অফিসের নিয়ম অনুযায়ী সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম এবং সব টাকা অফিসে জমা দিয়েছি। তিনিও আরোও বলেন, আমি জয়েন করার ৫-৬ মাস পর চাকরি ছেড়ে দিছি। এখন তাদের অফিস বন্ধ,ভাড়াও বাকি আছে।
ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন ইটনা শাখার বর্তমান ম্যানেজার মোঃ জামাল হোসেন বলেন, আমাকে মাঠ কর্মী থেকে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ৭ মাস ধরে অফিস বন্ধ, এদিন-সেদিন আসবে বলে দিন যাচ্ছে। ইটনা উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্য রয়েছে বলে তিনি জানান।
ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন ইটনা শাখার তথ্য মতে, উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে সাড়ে চার হাজার সদস্য, তাহলে ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন সদস্য ফরম থেকে টাকা পেয়েছে ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা (৪৫০০×১৫০=৬,৭৫০০০)। আবার গড়ে প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্জয় নিয়েছে ৮০০ টাকা করে তাহলে মোট সঞ্জয় নিয়েছে ৩৬ লক্ষ টাকা (৪৫০০×৮০০=৩,৬,০০০০০)। তাহলে মোট টাকা নিয়েছে ৪২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রলোভন দেখিয়ে আলাদা ভাবে প্রায় ৫-৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ পলাশের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অফিসাল কাজে ঢাকায় ব্যস্ত আছি, কিছুদিন পর মিঠামইন অফিসে গিয়ে কথা বলার জন্য। গ্রাহকদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেই ফোন কেটে দেয়। আর ফোন রিসিভ করেননি।
ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাফিসা আক্তার বরাবরও ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলেন জানান ইউএনও ইটনা।