আফরোজা আক্তার জবা ভালুকা প্রতিনিধি: দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গাজীপুর জেলায় গনশুনানিতে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানেরও ম্যাসেজটা এমন যে, রাষ্ট্র এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে যেখানে অনুপার্জিত অর্থ কেউ যেন ভোগ করতে না পারে। সে লক্ষ্যেই দুদক সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার গাজীপুর সদরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদক আয়োজিত গণশুনানিতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক সচিব আরও বলেন, গুরুতর অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে দুদকের আইন ও নিয়মানুযায়ী পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা হবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির কোথাও কোন সুযোগ নেই। যে যেই ধর্মেরই হোন না কেন, কেউ কিন্তু দুর্নীতিকে সাপোর্ট করে না। কোনো অভিযোগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশের জনগণ যতদিন সেবাটি না পাবে ততদিন দুদক আপনাদের সঙ্গেই আছে, থাকবে।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবু তোরাব মো.শামসুর রহমান, দুদকের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মোরশেদ আলম, গাজীপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এমএ বারী। গণশুনানিতে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকে সেবা গ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুর শহরে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে এলাকাবাসী থেকে প্রাপ্ত লিখিত অভিযোগের ওপর প্রধান অতিথির সামনে অভিযোগকারীর অভিযোগ উপস্থাপন করা হয় এবং সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কাঙ্খিত সেবা পান না। চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে যেই ওষুধ লেখেন তার সবগুলো হাসপাতালে পাওয়া যায় না, বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালটিতে দালালচক্রে ভরা।
অনুষ্ঠানে গাজীপুরের মোঃ মনজুরুল ইসলাম অভিযোগ তুলেন যে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ চান্দনা গাজীপুর এ কর্মকর্তারা সরকারি মালামাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন, প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার, প্রকৌশলী মোঃজাহিদুল ইসলাম, ডি জি এম কারিগরী, মোঃ মাহমুদুল হাসান মুন্না এ জি এম অর্থ হিসাব, জহিরুল ইসলাম, এজি এম এইচ আর, সজল কান্তি দাস, হিসাব রক্ষক, এস এম নাহিদ সিরাজ এ জি এম ই এন্ড সি।
মালামাল আত্মাসাৎ কৃত ইউআর ই ডি এস( শতভাগ) ঠিকাদার ফার্মের নাম ও কার্যাদেশ, মেসার্স দ্বীপ এন্টারপ্রাইজ কার্যাদেশ নং সি ১৮-১০-০৭৯, মেসার্স নুরজাহান এন্টারপ্রাইজ, কার্যাদেশ নং সি ১৮-১০-০৮০, সুপার পাওয়ার, কার্যাদেশ নং সি ১৮-১০-০৮১, মেসার্স সরকার এন্টারপ্রাইজ, কার্যাদেশ নং সি ১৮-০৩-৫০( এম), মেসার্স রবি ইন্জিনিয়ারিং কার্যাদেশ নংসি ১৯-১২-১২৬ (এম)
ঠিকাদার কাজ না করে বিল প্রদান করেছে। সরকারি মালামাল গুলি আত্মসাৎকরেন। ৫ টি কার্যাদেশের সরকারি মালামাল গুলি ৫ জন কর্মকর্তা বিক্রি করে দেন। প্রায় চার কোটি টাকার মালামাল বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা প্রদান না করে ভাগাভাগি করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন।মুনজুরুল ইসলাম তার অভিযোগে আরও বলেন সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল নামে বেনামে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাই তার সকল সম্পদের হিসাব নেয়ার দাবী করেন তিনি।
এভাবে প্রায় শত প্রশ্ন শুনে দুদক সচিব বলেন, সব অভিযোগেরই অনুসন্ধান চলছে, সব কিছুই তদন্ত হবে।
এভাবে সকাল ১০টা থেকে টানা বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিআরটিএ, পল্লীবিদ্যুৎ, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অভিযোগের বিষয়ে জবাব ও সমাধানের আশ্বাস দেন।
এর আগে বিভিন্ন স্থানে দুদকের ১৪৮টি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুর নিয়ে দুদকের ১৫৯টি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হলো।