ইউএনও- (রাবেয়া পারভেজ)
কোন একটি উপজেলার প্রায় শতভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগের তারিখের সাথে জন্মগ্রহন করা সন্তানের বয়সের মিল নেই। যেমন,মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়েছেন ২০১৬ সালে কিন্তু সন্তানের জন্ম নিবন্ধনে জন্ম ২০১৮ সাল! যেহেতু সরকারি চাকুরীজীবিদের ডাটাবেজ আছে তাই এ-ই তথ্য বা প্রমান পাওয়া যাবে সহজেই। আর যারা চাকুরী করেন না তাদের ক্ষেত্রেও বাচ্চাদের প্রকৃত জন্ম তারিখ আর জন্ম নিবন্ধনে বয়স এক নয়। প্রতিটি ক্লাসে গেলেই অসম বয়সের বাচ্চাদের দেখেই তা প্রমাণ করা সম্ভব। একই ক্লাসের বাচ্চাদের মধ্যে পার্থক্য এক থেকে ৫/৭ বছরও দেখা যায়।।
৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ৫ম শ্রেনির বৃত্তি পরীক্ষার হলে একই চিত্র দেখা গিয়েছে। অথচ,বাচ্চাদের জন্ম তারিখ কিন্তু সবার একই বছরের। শতকরা ৫ জন বা ১০ জন সঠিক হলে সেটাকে ওই ৫ জন বা ১০ জনের জন্য বিড়ম্বনা হিসেবেই দেখতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো,আমাদের সমাজ এটাকে কোন অপরাধ মনেই করেন না। একটা সময় ছিল যখন বাবা মা জানতেন না জন্ম তারিখটা কবে।সব বাবা হয়তো তাদের সব সন্তানের জন্ম তারিখ বলতে পারেন নি। তখন স্কুলের শিক্ষকরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে জন্ম তারিখ বানাতেন যা বাস্তবতা এবং এটা মেনে নিতেই হবে।
কিন্তু এই যুগে কেন! এক বছর বয়স চুরি করে নিজের চেয়ে ছোট বয়সের বাচ্চাদের সাথে পড়া অপরাধ। বয়স কমিয়ে এক/দুই/তিন বছর বেশি চাকুরী করে সরকারের বেতন ভাতা বেশি নেয়াটাও যে চুরি ও দূর্নীতি এই বোধটা আমাদের মধ্যে আসতে আর কত সময় লাগবে?
ঘুষ ও দূর্নীতিই শুধু অন্যায় নয়।এটাও অন্যায় অপরাধ। অসম বয়সের বাচ্চাদের একই কাতারে রাখা আমাদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। দুই তিন চার বছরের পার্থক্যের বাচ্চাদের একই শ্রেণিতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব, প্রতিযোগিতা তাদের একসাথে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে শংঙ্কা থেকে যায়।
জন্ম নিবন্ধন ও ইউনিক আইডি নিয়ে সরকারের চমৎকার একটি উদ্দ্যোগ চলমান। তাই আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ-ই বয়স লুকোচুরির অবসান হবে আশা করা যায়।
তবে খুলনায় একই বাচ্চার ৯ টি আলাদা আলাদা জন্ম নিবন্ধন করিয়ে ভর্তির লটারিতে অংশ গ্রহন করাটা একটি এলার্মিং ঘটনা। কেননা,যদি মূল জায়গাটায় সচেতনতাবোধ তৈরি করা না যায় তাহলে বাংলাদেশের জনগনের জন্ম তারিখ নিয়ে চলমান অরাজকতা থেকেই যাবে।
জানুয়ারি মাস স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ তারা যেন তার সন্তানের শিক্ষিত সচেতন মানুষ হওয়ার পথ চলার শুরুটাই বয়স চুরি দিয়ে না করেন।
শুরুতেই চুরি নয়। সত্য নিয়ে এগিয়ে যাক আমাদের সন্তান। আমি আমার সন্তানের বয়স চুরি করিনি।
আপনি করেছেন কি?
লিখাঃ রাবেয়া পারভেজ,
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
হোসেনপুর,কিশোরগঞ্জ।