সোহেল রানা রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে জান্নাতি বেগম (১৮) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আদালত ও থানায় দায়ের করা মামলায় ৫০ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামিরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পুলিশের নিস্ক্রিয়তাসহ নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ঘটনার আদ্যোপান্ত সব জেনেও পুলিশ তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করছেনা দাবি মামলার বাদী ও নিহত পরিবারের। নিহত গৃহবধূ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের পিয়ালীমারী গ্রামের জেমের স্ত্রী ও মনাকষা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের নাজির হোসেনের মেয়ে। নিহতের মা নুরেফা বেগমের অভিযোগ- উপজেলার চর ভবানীপুর গ্রামের আলমের ছেলে আলামিন তাকে কৌশলে আমবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং পরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গাছে ফাঁসি দেয়ার মত করে ঝুলিয়ে রাখে। তিনি বলেন, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এমন জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারে সন্দেহ। মেয়ে হত্যার বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ যেন দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে। জান্নাতির চাচাতো ভাই আহসান হাবিব মামলার তিন নং সাক্ষি বলেন, ঘটনার দিন ( ১ অক্টোবর ) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে জান্নাতি মুঠোফোনে আমাকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার করার কথা বললেও আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। হত্যার কয়েক ঘন্টা আগে জান্নাতি ফোনে আমাকে জানায় আমাকে বাঁচাও ,ওরা আমাকে ধর্ষন করেছে এখন মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে জান্নাতি বেগম তার পিতার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় এবং রাত ১১ টার দিকে নিখোঁজের বিষয়টি জানাজানি হয়। পরদিন সকালে পার্শ্ববর্তী গোপালপুর কবরস্থানের পূর্বে আমবাগানের একটি গাছ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের চাচা অকিল হোসেন জানান, আসামিরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এর আগে পার্শ্ববর্তী শিংনগর গ্রামে এক মেয়েকে উত্যক্তের জেরে ৫ নম্বর আসামি রহিমকে গণধোলাই দেয় স্থানীয় জনতা। নিহতের বাবা নাজির হোসেন জানান, আলামিন ও তার সহযোগি আসামিরা মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার প্ররোচনা চালায়। অবিলম্বে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। মামলার বাদি ও নিহতের মা সুরেফা বেগম জানান, মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় প্রথমে মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। গত ২ নভেম্বর আলামিনকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে মামলার আবেদন করলে শিবগঞ্জ থানার ওসিকে মামলাটি রেকর্ডের নির্দেশ দেন আদালত। ৯ নভেম্বর শিবগঞ্জ থানার ওসি মামলাটি (নং ২২) রেকর্ড করেন। তবে মামলার ৫০দিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। প্রকাশ্যে আসামিরা এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানান তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, আসামী ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ সঠিক নয়, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পাওয়া গেলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে, যে মামলাটি হয়েছে তা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ ৩২৩ ও ৩০৭ ধারায়। আসামীরা হলো ভবানীপুর শিংনগর এলাকার আল আমিন, গোলাব, শাওন, রুবেল ও রহিম। ৩ নভেম্বর আদালত এ মামলায় রিপোর্ট দাখিলের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিলেও এখনও পুলিশের রিপোর্ট আদালতে যায়নি।