পাকুন্দিয়া ( কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। কখন গোয়াল থেকে গরু চুরি হয় এই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। গত কয়েক মাসে এ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ রবিবার দিবাগত রাতেও উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের হরশী গ্রামের বড়বাড়ি থেকে ৭ টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। এই ঘটনায় সোমবার (২১ নভেম্বর) সকালে পাকুন্দিয়া থানায় গরুর মালিক ফেরদৌস মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিক-আপ দিয়ে রাতের শেষ দিকে গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা। যাওয়ার পথে কয়েকটি বাজার থাকে রাস্তায় এবং পুলিশের টহল বা চেকপোস্ট থাকে আর প্রতিটি বাজারে পাহারাদার থাকে তারা যদি মধ্য রাতের পরে পিক-আপ বা ট্রাকগুলি চেক করতে পারতো তাহলে গরু চুরি রোধ করা সম্ভব হতো।
এছাড়াও কয়েক সপ্তাহ আগে উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের কোদালিয়ার সাংবাদিক এম এ হান্নানের বাড়ি থেকে ২ টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে পাকুন্দিয়া পৌর সদরের বরাটিয়া এলাকা থেকে তিন কৃষকের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙ্গে ৭ টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। সাতটি গরুর মূল্য প্রায় তিন লক্ষ বায়ান্ন হাজার টাকা হবে। এ বিষয়ে গরুর মালিক আজিম উদ্দিনগং বাদি হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।
এছাড়াও গত ৭ এপ্রিল রাতে জাংগালিয়া ইউনিয়নের কাজীহাটি গ্রামের সেফাল উদ্দিনের বাড়ি থেকে গোয়াল ঘরের তালা কেটে দু’টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা। গরু দুইটির অনুমানিক দাম প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গত ১১ এপ্রিল রাতে নারান্দী ইউনিয়নের পোড়াবাড়িয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক শহিদুল্লাহর গোয়ালঘর থেকে ১টি গরু চুরি হয়। ওই গরুর অনুমানিক দাম প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এই ঘটনায় ১২ এপ্রিল পাকুন্দিয়া থানায় গরুর মালিক শহিদুল্লাহ বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ১৫ এপ্রিল রাতে পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের গোলাপ মিয়া নামের একজনের গোয়াল ঘর থেকে একসাথে ৩ টি গরু চুরি হয়। গরু তিনটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ ২১ হাজার টাকা। প্রতিদিনই উপজেলার কোনো না কোনো বাড়ি থেকে গরু চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। গরু চুরির হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক কৃষক রাতের বেলা বসত ঘরে নিয়ে গরু রাখছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোথাও কোথাও বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে গরু চোর ধরা পড়লেও পরে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে যায় তারা।
ভূক্তভোগীরা জানান, চুরির ব্যপারে থানায় মামলা করে কোনো লাভ হয়নি।
পুলিশের নজরদারির অভাব আর রাত্রিকালীন টহল না থাকার কারণে চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। সংঘবদ্ধ চোরের দল নানা কৌশলে একের পর এক চুরি করে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রায় প্রতি রাতেই গোয়াল ঘর থেকে চোরের দল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দরিদ্র কৃষকের সহায় সম্বল। যাদের গরু আছে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ জমানো সঞ্চয়, ধার-দেনা কিংবা ঋণ নিয়ে গরু কিনে তা লালন পালন করে থাকেন। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতে তারা অনেক কষ্ট করে থাকেন। গরুর দুধ বিক্রি করে পরিবারের খরচের টাকা যোগান। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর গরু চোরেরা যখন এসব মূল্যবান গরু চুরি করে নিয়ে যায় তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
রাতের বেলায় যেসব সড়কে আলো থাকে না কিংবা অনেকটা নির্জন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি উন্নত বিশেষ করে সেসব এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, গরুর ঘর থেকে রশি কেটে অথবা খুলে গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তবে এসব ঘটনায় গরু চোরদের গ্রেফতার করতে না পারায় একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে।
একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানরা বলেন, প্রতিমাসে উপজেলায় মাসিক আইনশৃংখলা মিটিং আলোচনা হলেও চুর ধরা না পরায় কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে গরু চুরি। এতে করে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ কৃষক ও গরু খামারের উদ্যোক্তারা।
গরুচুরি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পাকুন্দিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি নাহিদ হাসান সুমন জানান, তদন্ত অব্যাহত আছে। গরু চুরি রোধে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।