আঃ হামিদ মধুপুর( টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের মধুপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব উপলক্ষে গোষ্ঠ পূজা, শোভাযাত্রা, গো-গ্রাস দান, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, সন্ধ্যায় মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্কিনীর মিলন অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ধারাবহিক এসব কর্মসূচি পালিত হয়। বিচিত্র সংস্কৃতির চারণ ভূ’মি ও ব্রিটিশ বিরোধী ফকির সন্ন্যাস বিদ্রোহের সূতিগাথার মধুপুরের ঐতিহ্যেও বিশেষ দিকগুলোর অন্যতম এ গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব। একে ঘিরে মাসব্যাপি গোষ্ঠ মেলার ঐতিহ্য স্থানীয়রা বিস্মৃত হয়নি। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে গোষ্ঠ মেলা ব্যতীত ধর্মীয় আনুষ্ঠিানিকতার সবই পালিত হয়ে আসার ধারাবহিকতায় মঙ্গলবার ও দিনব্যাপি পালিত হয় কর্মসূচি।
মদন গোপাল মন্দির এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক সুধাংশু দেবনাথ জানায়, তিথি অনুযায়ী (অষ্টমী তিথি) গোষ্ঠ অষ্টমী দিনে সকালে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বর্ণিল সাজে, রঙ বেরঙের পতাকা হাতে রাখাল (কৃষ্ণ) রাখালী (রুক্কিনী) সাজানো হয়। এরপর রাখালদের একটি র্যালিসহ মহারাণী হেমন্ত কুমারী স্মৃতি জড়িত মদন গোপাল আঙিনা থেকে নাটু গোপালকে (সাজানো বালক কৃষ্ণ) সাথে নিয়ে মন্দিরে আসা হয়। মদনগোপাল আঙিনার ওই মন্দির থেকে পরে শ্রীকৃষ্ণকে আরেকটি (কুঞ্জ) মন্দিরে (মধুপুর ক্লাব সংলগ্ন) নিয়ে আসা হয়। রুক্কিনীকে রাখা হয় কুঞ্জ মন্দিরের বিপরীত দিকের আরেকটি মন্দিরে। পরে পূর্ব নির্ধারিত ধানখেতে নিয়ে যাওয়া হয় রাখাল দলকে। ধানখেতে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানকালীন খেতের চারিদিক সাত বার প্রদক্ষিণ করে রাখালেরা গরুকে ধান খাওয়াতে শুরু করে। এসময় মায়েরা কেউ পুত্র কামনায় আবার কেউ পুত্র বাৎসল্যে রাখালদের আদর করে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি খাওয়ান। পরে সেখান থেকে মন্দিরে ফিরে রাখালদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হয় দিবসের কার্যক্রম।
মন্দির কমিটির অন্যতম কার্যকরি সদস্য শুভ চৌহান জানান শ্রীকৃষ্ণ আর রুক্কিনির মধ্যে জাগতিক
যে বিয়ে হয়েছিল রাতের পর্বে থাকে রুক্কিনী-শ্রীকৃষ্ণের সেই বিবাহোত্তর মিলন অনুষ্ঠান। রাত ১০টার দিকে মিলন অনুষ্ঠানে আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠে আবাল বৃদ্ধ বনিতা। এর আগে সন্ধ্যা থেকে মদন গোপাল বিগ্রহ মন্দিরের ভিতরে দীর্ঘক্ষণ চলে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনা। এরপরই সকালে পৃথক মন্দিরে রেখে আসা নাটু গোপাল রূপী শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্কিনীকে মিলন ঘটাতে চলে আনন্দ উল্লাস। একদিক থেকে একদল ঢাক বাদ্যের তালে নাচতে নাচতে নিয়ে আসে কৃষ্ণকে অপর দিক থেকে রুক্কিনী কে। এক ঘন্টার এ উৎসব উল্লাস শেষে মধুপুর পৌর শহরের সাথীর মোড় বটতলা (মিলনতলা) মিলন ঘটানো হয়। হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমবেত হয় এ দৃশ্য দেখতে। যেন সত্যিকারেই রুক্কিনী-কৃষ্ণের বিয়ে ও দুই জনের কাছাকাছি চলে আসা যাকে স্থানীয়রা মিলন বলে অভিহিত করেন।এ উৎসবে যোগ দিতে দূরদূরান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু) ভক্তরা মধুপুরের আত্মীয় বাড়িতে নাইওর আসতেন। পূরবী (উপহার) দেওয়া হতো আগতদের। এখনও সে চর্চা আছে শুধু গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসবকে কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মধুপুর পৌর শাখার সভাপতি জয় দে সরকার জানান, এক সময় এ উপলক্ষ্যে মাসব্যাপি মদন গোপাল আঙিনায় মেলা বসতো। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রা পার্টি, বিখ্যাত রওশন সার্কাস, পুতুল নাচ, যাদুকরদের যাদু খেলা, নাগরদোলা আসতো। সারি বেধে মিষ্টির দোকান, খেলনা দোকান এসবের পসরা নিয়ে বসত। যদিও এখন সে মেলা আর বসে না। হারানো ওই ঐতিহ্য এখন বয়স্কদের কাছে কেবলই স্মৃতি। রূপকথার মতো মনে হয় কিশোর-কিশোরীদের কাছে। অধিকাংশ সনাতনীদের স্বপ্ন, দখলদারদের থাবা থেকে মদন গোপাল আঙিনা মুক্ত করে আবারও এলাকার এ ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীত করা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মধুপুর পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদর্সন সিংহ কৃষ্ণ সনাতনীদের এ স্বপ্নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, ঐতিহ্যের মধুপুর যেসব কারণে সমৃদ্ধ ছিল তার মধ্যে এ গোষ্ঠ মেলা অন্যতম। এটি আর না হওয়া মানে মধুপুরের গৌরবের পালক থেকে একটি গৌরব খসে পড়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.