মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি।
যশোরের বাঘারপাড়ার দুধর্ষ ডাকাত,মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান,অস্ত্রধারী,বোমাবাজ,প্রতারক এবং ৯ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামীর দীর্ঘদিন নাইট গার্ডের ছদ্মবেশে চট্টগ্রামে আত্মগোপন করে।এবং সর্বশেষ আইন শৃংখলা বাহিনীর মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পোশাক শ্রমিকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে ঢাকায় নিয়ে ধর্ষণের অপরাধে উক্ত দুধর্ষ সন্ত্রাসী র্যাব-৭,চট্টগ্রাম কর্তৃক আটক।
১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ঃ৪৫ টায় নগরীর ইপিজেড থানাধীন এমজেডএম ফ্যাক্টরি হতে আসামী মোঃ জাহিদ হাসান একইব্যাক্তির এজহার নামীয় @বোমা জাহিদ @নাহিদুল হাসান সজিব @মোঃ জাহিদুল সরদার @নাহিদ @সজিব, আটক করতে সক্ষম হয়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়,ভুক্তভোগী ভিকটিম চট্টগ্রাম মহানগরীতে কর্মরত একজন সহজ সরল গার্মেন্টস কর্মী। গত এক বছর পূর্বে আসামী মোঃ জাহিদ হাসান (বোমা জাহিদ) এর সাথে রং নাম্বারে ভিকটিমের পরিচয় হয়। জাহিদ নিজেকে ভিকটিমের নিকট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য এবং র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেয়। সে ভিকটিমকে আরও জানায় বর্তমানে সে এলপিআরএ আছে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড এলাকায় এমজেডএম কোম্পানীতে কর্মরত রয়েছে।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। আসামী জাহিদ ভিকটিমকে প্রায় সময়ই বিয়ের প্রলোভন দেখাতো এবং মোবাইলে তার মা ভাই, বোন এর সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিত। গত ০২ আগস্ট ২০২২ইং তারিখে আসামী জাহিদ ভিকটিমকে তার বাড়ি যশোরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে বলে জানায়। এজন্য তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে জাহিদ ভিকটিমকে ঢাকায় রমনা মডেল থানাধীন একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভিকটিমকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষনের পর আসামী জাহিদ ভিকটিমের কাছে থাকা ৩,৮০০/- টাকা এবং গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে সেখান হতে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ভিকটিম হেটেল হতে বের হয়ে একজন ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় রমনা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যান এবং আসামী জাহিদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ০৫ তারিখ ০২ আগস্ট ২০২২ইং, ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(১) তৎসহ ধারা ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড।
ভিকটিম কর্তৃক রমনা থানায় দায়েরকৃত মামলার এফআইএর এ আসামীর নাম দেয়া হয় নাহিদুল হাসান সজিব,পিতা-অজ্ঞাত,মাতা-নুপুর খাতুন। আসামী এ নামগুলো ভিকটিমের নিকট বলেছিল। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক আসামীর নাম মোঃ জাহিদ হাসান। সে তার এলাকা যশোরে মোঃ জাহিদ সরদার (বোমা জাহিদ) নামে পরিচিত। সে যশোর জেলার বাঘারাপাড়া এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। যশোর জেলার বাঘারপাড়া এবং কোতয়ালী থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, প্রতারণা, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অপকর্মের ০৯ টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা হতে গ্রেফতার এড়াতে সে যশোর হতে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। পরবর্তীতে সে চট্টগ্রামে এসে ইপিজেড এলাকায় এমজেডএম কোম্পানীতে নাইট গার্ড এর ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে। ব্যক্তি জীবনে সে ২টি বিয়ে করেছে। যশোরে তার এক স্ত্রী এবং দুটি সন্তান রয়েছে এবং চট্টগ্রামে তার আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। দুটি স্ত্রী থাকা সত্বেও সে আরেকটি মেয়ের সর্বনাশ করতে দ্বিধা বোধ করেনি।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে বর্ণিত ধর্ষণ মামলা এবং যশোরের ৯ মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামী মোঃ জাহিদ হাসান (বোমা জাহিদ),নাহিদুল হাসান সজিব,মোঃ জাহিদুল সরদার,নাহিদ,সজিব চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৮ অক্টোবর আসামীকেকে আটক করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী স্বীকার করে যে, সে ভিকটিমকে গত ০২ আগস্ট ২০২২ খ্রিঃ তারিখে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় রমনা মডেল থানাধীন একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, যশোরে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাসমূহ হতে গ্রেফতার এড়াতে সে চট্টগ্রাম এসে আত্মগোপন করেছিল এবং বর্ণিত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত ও একাধিক অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, প্রতারণা, বিস্ফোরক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামী বলে স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, যশোরের ৯ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী জাহিদ গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম এসে নাম পরিবর্তন করে কখনও নাহিদ আবার কখনও সজিব নামে ছদ্মবেশে নাইট গার্ডের চাকুরী করত এবং নিজেকে কখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কখনোও র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দিত। এমজেডএম কোম্পানীতে চাকুরীর নেওয়ার সময় সে নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য বলে উল্লেখ করে এবং র্যাবে চাকুরী করেছে বলে ভূয়া তথ্য প্রদান করে। এছাড়া বর্তমানে সে এলপিআরএ আছে বলে জানায়। এছাড়াও আশেপাশের মানুষের নিকট সে নিজেকে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিত। আসামী জাহিদ যশোরে ৯ মামলা হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নামে ছদ্মবেশে আত্মগোপন করলেও তার অপরাধ করার প্রবনতা সে ত্যাগ করতে পারেনি এবং চট্টগ্রামেও সে ধর্ষনের অপরাধে জড়িয়ে যায় এবং অবশেষে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের নিকট গ্রেফতার হয়।
উল্লেখ্য, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত আসামী মোঃ জাহিদ হাসান @বোমা জাহিদ এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, প্রতারনা, বিস্ফোরণ এবং ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মের যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানায় ০৮টি, কোতয়ালী থানায় ০১টি এবং ঢাকার রমনা থানায় ০১টি মামলা সহ সর্বমোট ১০টি মামলা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।