নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: সামান্য বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ২০ পরিবারের নারী। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ঘরে বসে কাসুন্দি তৈরি করে আয় করছেন তারা। কাসুন্দির অপর নাম কাসন। এটি তৈরি করা হয় ঝাঁজাল সরিষা ব্যবহার করে। উপজেলার হাটধুমা হিন্দুপাড়ার নারীদের তৈরি কাসুন্দি বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে ও গ্রামে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন পরিবারের পুরুষরা। এ বছর বিভিন্ন জেলাসহ সরাসরি রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছে কাসুন্দি। গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি অর্ডার অনুযায়ী কাসুন্দি তৈরি করে নিচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সে বিষয়ে কেউ কথা বলতে চাননি। দীর্ঘদিন ধরে কাসুন্দি তৈরি হলেও হঠাৎই হাট-বাজারে কাসুন্দির চাহিদা বেড়েছে। ভাত, মুড়ি, আম, আনারস, পেয়ারাসহ টক-মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন ফলের স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় কাসুন্দি।
সরেজমিনে গিয়ে হাটধুমা হিন্দুপাড়ার সোহাগী বালা, কাঞ্চনী বালা, অনন্ত বালা, নিরমলা বালা ও দেবলা বালাসহ ২০ পরিবারের নারীদের সাথে কথা হয়। তারা জানান, বাজার থেকে ৮০ টাকা কেজিতে সরিষা ক্রয় করে বাড়িতে এনে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেয়। শুকনো সরিষা এবং শুকনো হলুদ গোটা ঢেঁকিতে গুঁড়া করে। অন্যদিকে চুলায় কড়াই এবং পাতিল বসিয়ে পানি গরম করে। পরে অন্য পাতিলে গরম পানি ঢেলে সরিষা এবং হলুদ গুঁড়া মিশ্রণ করে। এরপর পাতিলের মুখ পাতলা কাপড় দিয়ে বেঁধে তিন-চার দিন রেখে দেয়। পাতিলগুলো প্রতিদিন রোদে রাখে। তারপর বোতলজাত করারপূর্বে আলাদাভাবে পানি গরম করে পাতিলে নেওয়া হয়। সেই পানি ঠান্ডা হলে পাতিলের জমানো মিশ্রিত সরিষা-হলুদের সাথে মিশ্রণ করে। শেষে গুঁড়া মরিচ, লবণ, জিরা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন গুঁড়া মসলা মিশ্রণ করে পরিষ্কার বোতলে কাসুন্দি ভরে রাখে। তবে উন্নতমানের কাসুন্দির ক্ষেত্রে পৃথক পানি মিশ্রণ করে না। উন্নয়তমানের কাসুন্দিতে পানির পরিবর্তে সরিষার তেল মিশ্রিত থাকে। ১ কেজি সরিষা থেকে ঘণ কাসুন্দি আড়াই কেজি থেকে ৩ কেজি হয়। পাতলা করলে হবে ৪ কেজি। বাজারে কাসুন্দি নরমাল ৬০ টাকা কেজি এবং উন্নয়ত মানের কাসুন্দি বিক্রি হয় ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা।
নিভা বালা নামের একজন বলেন, ঢাকা থেকে অর্ডার আসে। সে অনুয়ায়ী কাসুন্দি পাঠাচ্ছি। অনেকে গ্রামে এসে অর্ডার দিয়ে নিজেরাই নিয়ে যাচ্ছে। দামও ভালো পাচ্ছি। সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে ঘরে বসে কাসুন্দি তৈরি করে হাটধুমা হিন্দুপাড়ার নারীরা।
সোনালী বালা নামের এক গৃহীনি বলেন, পরিবারে ছেলে-মেয়েসহ চার সদস্য। মেয়ে বৃষ্টি বালা ১০ম শ্রেণিতে এবং ছেলে বিশাল কুমার ৫ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। কাসুন্দি বিক্রির টাকায় সংসারের খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের পরও আয় থাকে।
গোপেশ^র চন্দ্র মহন্ত নামের আরেকজন বলেন, বাদ-দাদারা কাসুন্দি তৈরি করেছে, এখন আমরা করি। নিজের উপজেলার হাট-বাজার ও জেলা বগুড়ার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলায় কাসুন্দি বেশি চলে।