কুশিয়ারা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এবং প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,সমগ্র উপজেলায় ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।ইতোমধ্যে উপজেলার বাঘা ইউপিতে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হলে সেখানে প্রায় সহশ্রাধিক বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন।বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।জানা গেছে,সুরমা নদীর পানি কিছুটা বিপদ সীমার নীচে থাকলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।প্রতি দিন উপজেলার কুশিয়ারা অঞ্চলের আমুড়া,বুধবারীবাজার বাদেপাশা,শরীফগঞ্জ,ভাদেশ্বর ইউপিসহ প্রায় ১১টি ইউপি ও একটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার মানুষ।কর্মহীন হয়ে পড়ছেন শ্রমিক,দিন-মজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন।আরো জানা যায়, দু’দিন ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলছে।উপজেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তাগুলোর ভাঙন দেখা দিয়েছে।কোনো কোনো স্থানে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।অস্বাভাবিকভাবে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাদরাসা,মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এছাড়া আরো চার থেকে পাঁচটি বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।দীর্ঘ দিন পর উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়ায় মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গো-খাদ্যের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে।উপজেলা প্রশাসন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ রাখতে ও বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন।প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম কবির বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দেশের বাইরে থাকায় ফোনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক(ডিসি)ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বন্যার্তদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে বন্যা কবলিত এলাকায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য পৃথক পৃথক মেডিক্যাল টিম গঠন করে এলাকায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়।উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।ওই সব বন্যা কবলিত এলাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতাসহ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজারো পরিবার।ইতোমধ্যে উপজেলার বাঘা ইউপিতে চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হলে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার ও গবাদি পশুসহ আশ্রয়গ্রহণ করতে দেখা গেছে।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,সমগ্র উপজেলায় কয়েক হাজার একর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন উপজেলার শত শত কৃষক।উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়,উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের অব্যাহত ভারি বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।সুরমা নদীর পানি কিছুটা বিপদ সীমার নিচে থাকলেও কুশিয়ারা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়,এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ।পানিবন্দিরা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।বসতঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেকে মাচাঙ্গ বেঁধে,অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে খাটের উপর গৃহপালিত পশু রাখার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আবার কেউ কেউ উঁচু এলাকার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট-হাটবাজার,স্কুল-কলেজ,মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।বোরো ধান ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে।ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।বাঘা ইউপিসহ উপজেলা গোলাপগঞ্জ পৌরসভা,ফুলবাড়ি ইউনিয়ন,গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন,বুধবারীবাজার ইউনিয়ন, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন,বাদেপাশা ইউনিয়ন,শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন এবং আমুড়া ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন ওই সব ইউপির মানুষজন।উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি ও অব্যাহত বর্ষণে প্রতিদিনই এসব ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।প্রতিদিন বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।এতে করে গোলাপগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।